পুঁজিবাজার থেকে নীরবে প্রস্থান করছেন হাজারো বিনিয়োগকারী। দীর্ঘমেয়াদি মন্দা, আস্থার সংকট এবং ভালো শেয়ারের অভাবে গত ৯ মাসেই পুঁজিবাজার ছেড়েছেন বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন ৬২ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ তথ্যে এ চিত্রই উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক ঋণের সুদহার এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখন শেয়ারবাজারের ঝুঁকি এড়িয়ে সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটের মতো নিরাপদ বিনিয়োগে ঝুঁকছেন।
ফলে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন নেমে এসেছে তলানিতে, যা বাজারের স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সিডিবিএলের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে মোট বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৪৫২টি। ৯ মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা ৩০ হাজার ২২৫টি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ২২৭টিতে। তবে এর চেয়েও আশঙ্কার বিষয় হলো, শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের বৃদ্ধি।
গত বছরের ডিসেম্বরে শেয়ারশূন্য বিও হিসাব ছিল তিন লাখ ৪৩ হাজার ৯৭৪টি, যা এই সেপ্টেম্বরে ৩১ হাজার ৮৮৫টি বেড়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৮৫৯টিতে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ যে বিনিয়োগকারীরা এখনো বাজার ছাড়েননি, তাঁদের একটি বড় অংশ পোর্টফোলিও খালি করে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছেন। সব মিলিয়ে বিও হিসাব বন্ধ করা এবং শেয়ারশূন্য হয়ে পড়া—এই দুই ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৬২ হাজার ১১০। এই রক্তক্ষরণ হয়েছে সব ধরনের বিনিয়োগকারীর মধ্যেই।
৯ মাসে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব কমেছে ১৯ হাজার ৭২২টি এবং নারী বিনিয়োগকারীর হিসাব কমেছে ১০ হাজার ৭৩৫টি। একই সময় দেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কমেছে ২৭ হাজার ৫৬৭টি বিও এবং বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিও হিসাব কমেছে দুই হাজার ৮৯০টি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই প্রস্থান বুঝিয়ে দেয়, দেশের অর্থনীতির প্রতি তাঁদের আস্থায়ও চিড় ধরেছে।
কেন বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হচ্ছেন? এই প্রশ্নের জবাবে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মূল কারণ আস্থার সংকট। একটি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ