সকাল থেকে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি রাওয়ালপিন্ডিতে। আকাশ ছিল ঝকঝকে। তারপরও রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম দিন নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু হতে পারেনি। কারণ মাঠ ছিল ভেজা। আগের রাতের ভারী বর্ষণে মাঠে পানি জমেছিল। সে জন্য সকালের খেলা শুরু হয় বিকাল ৩টায়। দেরিতে শুরু হওয়ায় দিনের খেলা নির্ধারিত হয় ৪৮ ওভারে। কিন্তু সেটাও হয়নি আলোর স্বল্পতায়। ৪১ ওভার খেলা হয়। শান মাসুদের স্বাগতিক পাকিস্তান ৪ উইকেটে ১৫৮ রান তুলে প্রথম দিন পার করে। আবহাওয়া বলছে, আজও বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টিস্নাত ম্যাচের প্রথম দিন শুরুটা স্বপ্নের ছিল। দিনের প্রথম ৫০ বলে ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের খাদের কিনারায় পাঠিয়ে বাঁ হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ও ফাস্ট বোলার হাসান মাহমুদ। যদিও ওপেনার সাইম আইয়ুব ও সৌদ শাকিল দুজনের দুরন্ত হাফ সেঞ্চুরিতে বিপর্যয় কাটিয়ে নেয়। শেষ সেশনে আবার টাইগারদের ম্যাচে ফেরান হাসান মাহমুদ। তারপরও কোথায় যেনো একটু হতাশা থেকে যায়?
টেস্ট শুরুর আগে বাঁ হাতি পেসার শরিফুল তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। স্বপ্ন একটাই, বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার বাবর আজমের উইকেট। গতকাল সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আগের চার মুখোমুখিতে ফল ছিল শূন্য। গতকাল মুখোমুখির দ্বিতীয় বলেই স্বপ্ন পূরণ করেন শরিফুল। বাঁ হাতি পেসারের দারুণ এক ইনসুইংয়ে লেগ গ্ল্যান্স করেন বাবর। উইকেটরক্ষক লিটন দাস বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচ নেন। ২ বলে ০ রানে বাবোর ফেরেন সাজঘরে। ভেজা আবহাওয়ায় টস জিতে ফিল্ডিং নেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, সেটা প্রমাণ দেন দুই পেসার। ম্যাচের চতুর্থ ওভারে আঘাত হানেন হাসান মাহমুদ।
রাওয়ালপিন্ডিতে খেলা হচ্ছে কুকাবুরা বলে। নতুন কুকাবুরা বলে পেসাররা যে কোনো উইকেটে দুর্বিষহ। উজ্জ্বলতা থাকা পর্যন্ত বল সুইং করে অনেক এবং বাউন্সও বেশি। সেই সুবিধা আদায় করে নেন টাইগার পেসাররা। পাকিস্তান ব্যাটারদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন। উইকেটে ঘাস আছে জেনে স্বাগতিকরা ৪ পেসার নিয়ে একাদশ সাজায়। নাজমুল বাহিনী একাদশ সাজায় দুই স্পিন অলরাউন্ডার সাকিব ও মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তিন পেসার শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানাকে নিয়ে। দুই পেসার শরিফুল ও হাসান দারুণ বোলিং করলেও দীর্ঘদেহী নাহিদ রানা ছিলেন ব্যর্থ। নাহিদ গতিতে বল করেন। কিন্তু লাইন লেন্থ ছিল বাজে। দারুণ বোলিং করেছেন শরিফুল ও হাসান। দুজনই অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পরীক্ষা নেন স্বাগতিক ব্যাটারদের।
ইনিংসের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে হাসান আউট করেন আবদুল্লাহ শফিককে। তার ওয়াইড ফুলার লেন্থ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দেন। জাকির ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন। ষষ্ঠ ওভারে শরিফুল আউট করেন পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদকে। এরপর নবম ওভারে শরিফুল আউট করেন বাবরকে। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা পুরোপুরি কোণঠাসা। চেপে ধরেন টাইগাররা। কিন্তু সাইম আইয়ুব ও সৌদ শাকিল চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৯৮ রান যোগ করে দলের বিপর্যয় রোধ করেন। সাইমকে ফেরত পাঠান হাসান। ১১৪ রানে চতুর্থ উইকেটের পতনের পর সৌদ শাকিল ও মোহাম্মদ রিজওয়ান অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন পার করেন। সৌদ অপরাজিত রয়েছেন ৫৭ ও রিজওয়ান ২৪ রানে। আইয়ুব আউট হন ৫৬ রানে। শরিফুলের স্পেল ১২-৪-৩০-২। হাসানের স্পেল ১৩-৩-৩৩-২। খরুচে ছিলেন নাহিদ রানা। তার স্পেল ১০-০-৪৮-০। দুই স্পিনার সাকিব ও মেহেদিও বোলিং করেন। মেহেদির স্পেল ৪-০-২৪-০ এবং সাকিবের স্পেল ২-০-১২-০।