ঘরোয়া ফুটবলে বিভিন্ন ক্লাবে কোচের দায়িত্ব পালন করে শিরোপা জিতেছেন মারুফুল হক। এক মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ট্রেবল অর্থাৎ তিন শিরোপা জিতেছিল তারই প্রশিক্ষণে। ঘরোয়া আসরে মোটামুটি সফল হলেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ছিলেন ব্যর্থ। বাংলাদেশ জাতীয় দল মারুফের প্রশিক্ষণে সাফ চ্যাম্পিয়নসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। কিন্তু হতাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি লাল-সবুজের দল। মারুফুল ঘরোয়া আসরেও কয়েক বছর ধরে বড় কোনো ক্লাবের দায়িত্বে ছিলেন না। কেউ কেউ ভেবেছিলেন তিনি ফুটবল থেকেই দূরে সরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের অনুরোধে তিনি অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচ হন।
ভাগ্যবানই বলতে হয়। দায়িত্ব পেয়েই ইতিহাস গড়ে ফেললেন। এই প্রথম বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ দল সাফে চ্যাম্পিয়ন হলো। একবার ফাইনাল খেললেও রানার্সআপেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় যুবাদের। গতকাল ললিতপুর আনফা কমপ্লেক্সে অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সহজ জয়ে শিরোপার উৎসব অথচ এ নেপালের কাছেই গ্রুপ পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ ১-২ গোলে হেরে যায়। সেমিফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল মিরাজুলরা। এর পর তো ইতিহাস।
কোচ মারুফ ঢাকা ছাড়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘লক্ষ্য আমাদের একটাই-শিরোপা।’ নেপালে মাঠে নামার পরও সুর বদল হয়নি। কথা রেখেছেন মারুফ। সত্যিই যোগ্যতর দল হিসেবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শিরোপা জেতায় স্বাভাবিকভাবে উচ্ছ্বসিত তিনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মারুফ। তিনি বলেন, ‘দলের ও আমার এ অর্জন উৎসর্গ করলাম যারা সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। বহু ছাত্র ও নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরেছে যা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। এ দৃশ্য দেখে সারা দেশ চোখের পানি ফেলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশের দায়িত্ব নিয়েছে। আমার বিশ্বাস দেশ আবার ঘুরে দাঁড়াবে। দূর হবে সব হতাশা।’
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের যুবাদের শুরুটা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের ও দেশের প্রথম গোল করেন মিরাজুল ইসলাম। গোল করার পর জার্সির ভিতরে আলাদা টি-শার্ট পরেন। সেই টি-শার্টে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের নাম লেখা ছিল। যদিও তাঁকে হলুদ কার্ড দেখতে হয়। তার পরও বিশ্ব ফুটবলে এটি ছিল বিরল ঘটনা। ফাইনালে তিনি জোড়া গোলের পাশাপাশি আরেকটি অ্যাসিস্ট করেন। টুর্নামেন্ট-সেরা ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতেন তিনি। তিনিও এ শিরোপা শহীদদের উৎসর্গ করেন। বলেন, ‘আমরা নিজেদের জন্য খেলিনি, দেশের সবার জন্য খেলেছি। নেপালও ভালো খেলেছে। আমরা সেরাটা দিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’
ফাইনালে আরেক গোলদাতা রাব্বি হোসেন রাহুল বলেন, ‘শোক শক্তিতে পরিণত করেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ শিরোপা স্মরণীয় করে রাখতে শহীদদের নামে উৎসর্গ করতে চাই।’