মাথা সব সময় উপরের দিকে থাকে বলে রক্ত মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়। কারণ রক্ত সঞ্চালন ধমনিকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করতে হয়। এ ছাড়া শরীর যদি দীর্ঘ সময় ধরে নির্জীব থাকে, তবে স্নায়ুগুলোও অলস হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য এবং স্নায়ুগুলোকে সুস্থ ও সতেজ রাখার জন্য যোগ ব্যায়ামে চমৎকার একটি আসন রয়েছে। চক্রাসনের মাধ্যমে শরীরের স্নায়ুগুলোকে সতেজ রাখা সম্ভব। এ ছাড়াও বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে বেঁচে থাকা যায়।
চক্রাসন করার জন্য প্রথমেই সটান চিৎ হয়ে শুতে হবে। এবার পা দুটি ফাঁক করে হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে গোড়ালিদ্বয় নিতম্বের কাছে এনে হাত দুটি কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে হাতের তালু উপুড় করে দুই পাশে মাটিতে রাখতে হবে। এবার হাত ও পায়ের ওপর জোর দিয়ে মাথা, পিঠ ও কোমর সাধ্যমতো উপরে তুলতে হবে। ঠিক ধনুকের মতো দেখা যাবে। মাথা যতদূর সম্ভব পিছনদিকে নিয়ে আসতে হবে। এই আসনটিকে বলে অর্ধচক্রাসন। এরপর দুই হাত ধীরে ধীরে দুই গোড়ালির কাছে আনতে হবে। সম্ভব হলে দুই গোড়ালিতে ধরতে হবে। এভাবেই চক্রাসন পূর্ণ হয়। এই পজিশনে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে মাথা মাটিতে নামিয়ে এনে চিৎ হয়ে শুতে হবে। শবাসনে বিশ্রাম নিয়ে দুই থেকে তিনবার এই আসনটি করতে হবে।
এই আসন নিয়মিত অনুশীলন করলে মেরুদণ্ড সংলগ্ন স্নায়ু ও তার পাশের পেশি সতেজ ও সক্রিয় রাখে। বুকের পেশি ও পাঁজরের হাড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং বুক সুগঠিত করে। আসনটি অভ্যাসের সময় দেহের মধ্যভাগে প্রচণ্ড চাপ পড়ে বলে ওই অঞ্চলের পেশি, স্নায়ুজাল সবল ও সক্রিয় থাকে এবং পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, প্লিহা, যকৃৎ ভালো কাজ করে। যাদের বুক বয়স অনুযায়ী সরু ও অপরিণত তাদের জন্য এই আসনটি অত্যধিক উপকারী। এ ছাড়া এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে দেহের অতিরিক্ত মেদও দূর হয়। মনের চঞ্চলতা দূর হয় এবং ধৈর্য বেড়ে যায়।
আসনটিতে বুকে প্রচণ্ড চাপ পড়ে বলে যাদের হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুস দুর্বল, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য আসনটি করা উচিত নয়।