গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে খেলতে নেমে ২৫ মিনিট পর গ্যারিঞ্চার পাস থেকে বল পেয়ে গোল করতে গিয়ে উরুতে সাংঘাতিক আঘাত পান পেলে। ১৯৬২ সালে চিলি বিশ্বকাপে এরপর আর পেলেকে মাঠে দেখা যায়নি। ফেভারিট ব্রাজিলকে নিয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এরপর। তবে তখনো মাঠে ছিলেন ব্রাজিলের 'পঞ্চ পান্ডবে'র চারজন। গ্যারিঞ্চা-ভাভা-ডিডি-জাগালো। পেলের বদলি নামলেন আমারিল্ডো। তারকাখ্যাতিতে তারা সবাই ১৯৬২ বিশ্বকাপে ভক্তদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে সমালোচকদের দৃষ্টিতে সেরা ছিলেন গ্যারিঞ্চাই। সপ্তম বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার।
গ্যারিঞ্চা পর্তুগিজ শব্দ। অর্থ দি লিটল বার্ড_ খুদে পাখি। ল্যাটিন আমেরিকার 'রেন' পাখির সঙ্গে তার তুলনা হতো। উচ্চতায় ছিলেন মাত্র সাড়ে পাঁচ ফুট। তবে ফুটবল ইতিহাসের সেরা ড্রিবলার বলা হয় তাকেই। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলকে পৃথিবীর সঙ্গে একটা ব্যবধান এনে দেওয়ার কারিগর ছিলেন গ্যারিঞ্চা। রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলেছেন তিনি। আক্ষরিক অর্থেই প্লে-মেকার বলতে যা বুঝায়। তবে গোল করাতে এবং করতে ছিলেন সমান পারদর্শী। বল পায়ে দৌড়ানোর সময় মনে হতো, পায়ের সঙ্গে কোনো এক জাদুমন্ত্র বলে বুঝি ফুটবল আঠার মতো লেগে আছে! ১৯৫৮ বিশ্বকাপের আগেই গ্যারিঞ্চার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল ফুটবল বিশ্ব। তবে সেবার তেমন আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। ১৯৬২ বিশ্বকাপে গ্যারিঞ্চা হয়ে উঠলেন ব্রাজিলিয়ানদের আশা-ভরসার প্রতীক।
ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে পেলের বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর ব্রাজিলিয়ানদের আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন গ্যারিঞ্চা। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড এবং সেমিফাইনালে চিলিকে বলতে গেলে একাই হারিয়েছিলেন তিনি। দুই ম্যাচেই করেছিলেন দুটি করে গোল! দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে সর্বোচ্চ স্কোরারের পাশাপাশি সেবার জিতেছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা ফুটবলারের পুরস্কারও। গ্যারিঞ্চা বেশিদিন খেলতে পারেননি হলুদ জার্সিতে। ১৯৬৬-তেই শেষ হয় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। ততদিনে তিনি ৫০ ম্যাচ খেলে জাতীয় দলের হয়ে গোল করেছেন ১২টি। গোলের হিসাবে গ্যারিঞ্চাকে বিচার করতে যাওয়া হবে ভুল। দীর্ঘ সময় না খেলেও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে কিংবদন্তির মর্যাদা পেয়েছেন তিনি। পেলে এবং গ্যারিঞ্চার দারুণ একটা রেকর্ড আছে। এ দুজন একসঙ্গে মাঠে থাকতে ব্রাজিল কোনো ম্যাচে কখনো হারেনি।
গ্যারিঞ্চা ১৯৭২ সালে সব ধরনের ফুটবলকে বিদায় জানান। তখন তিনি খেলতেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব অলেরিয়া অ্যাটলেটিকোতে। ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর খুব বেশিদিন পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখা হয়নি গ্যারিঞ্চার। ফুটবল ছাড়ার পর থেকেই তার জীবনধারা সম্পূর্ণ বদলে যায়। মদ্যপ হিসেবে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন তিনি। জীবনের শেষ পর্যায়ে অতিরিক্ত মদ পান করায় লিভার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল গ্যারিঞ্চার। এ রোগেই মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর সব মায়া ত্যাগ করেন ১৯৮৩ সালের ২০ জানুয়ারি।
গ্যারিঞ্চার ব্যক্তিগত জীবনকে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ভক্তরা কখনোই মনে রাখেনি। ১৯৬২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ককে তারা হৃদয়ের মণি কোঠায় স্থান দিয়েছে। মারাকানা স্টেডিয়ামে তার আবক্ষ মূর্তিই কি তার প্রমাণ নয়!