আর মাত্র আটদিন পরই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা উঠছে। ২০১১ সালে নিজ দেশে বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি। গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছিলেন সাকিবরা। বিশেষ করে ওয়েস্ট উন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে শোচনীয় হারের কথা ভুলতে পারেননি দেশবাসী। এবার টার্গেট কোয়ার্টার ফাইনাল। যাক ক্রিকেট নিয়ে আপাতত ভাবনাটা নেই। সব উত্তেজনা ফুটবলকে ঘিরেই। দেশবাসী আজ চেয়ে থাকবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দিকে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ আজ সেমিফাইনালে লড়বে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। বিকাল পাঁচটায় ম্যাচ শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ে ফলাফল নিষ্পত্তি না হলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে খেলার ব্যবস্থা হবে। এখানেও ম্যাচ ড্র থাকলে টাইব্রেকারে জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হবে। চ্যানেল নাইন ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে। গ্রুপ পর্ব লড়াইয়ে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড প্রথম ম্যাচে সিঙ্গাপুর ৩-২, বাহরাইনকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে।
বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য আজকের ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১০ সালে এসএ গেমসে স্বর্ণ জেতার পর ফুটবলে বাংলাদেশের কোনো সাফল্য নেই। সাফ চ্যাম্পিয়ন শিপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। চ্যালেঞ্জ কাপেও ফলাফল সুখকর নয়। ফুটবলে ঘুরে দাঁড়াতে বঙ্গবন্ধু কাপে সাফল্য জরুরি হয়ে পড়েছে। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের টার্গেট ছিল সেমিফাইনাল। তা পূরণ হওয়ার পর মামুনুলরা এখন শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখছে। এ পথে আসতে হলে আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডকে হারাতেই হবে। না পারলে ফাইনালে নিজ দেশে দর্শক হয়ে বসে থাকতে হবে। থাইল্যান্ড দুই ম্যাচ জিতে সেমিতে উঠেছে। অনূর্ধ্ব-২৩ দল হলেও তাদের নৈপুণ্য দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। অথচ ‘বি’ গ্রুপে বাহরাইনকে ফেবারিট দল ধরা হয়েছিল। আরবের এই দেশ টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে দেশে ফিরে গেছে। যাক থাইল্যান্ড ভালো খেললেও বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার সামর্থ্য রয়েছে। এবারে বাংলাদেশ যে গতিময় খেলা খেলছে তা সচরাচর দেখা যায় না। আশির দশকে নাসের হেজাজি জাতীয় দলের প্রশিক্ষক হওয়ার পর বাংলাদেশ যে ছন্দময় খেলা খেলেছিল তা এবার বঙ্গবন্ধু কাপে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হারলেও যে গোলের সুযোগ নষ্ট হয়েছে তা কাজ লাগাতে পারলে ম্যাচ মামুনুলরাই জিততো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একই অবস্থা। যেখানে ৫/৬ গোলে জেতার কথা সেখানে কিনা গোল হয়েছে মাত্র ১টি। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে থাইল্যান্ডের অবস্থান ১৪৪ আর বাংলাদেশের ১৬৫। এরপরও মানের দিক দিয়ে দুই দলের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। থাইল্যান্ড জাতীয় দলকে হারানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। এক সময় আগাখান গোল্ডকাপে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন দল মোহামেডান ও আবাহনীর কাছে হার মেনেছে। সুতরাং আজকের ম্যাচে ভালো খেলতে পারলে অবশ্যই থাইল্যান্ডকে হারানো সম্ভব।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম দৃঢ়ভাবে বলেছেন, আমাদের প্রথম টার্গেট ছিল সেমিফাইনাল। এখন আমরা ফাইনাল খেলতে চাই। প্রতিপক্ষ হিসেবে থাইল্যান্ড অবশ্যই শক্তিশালী দল। কিন্তু আমরা যদি সবাই মিলে সেরা খেলাটা খেলতে পারি তাহলে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে রেখে জিততে পারব। তিনি বলেন, সেমিতে জেতার পর আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। এটা কাজে লাগাতে চাই। দেশবাসীকে জয় উপহার দিতে আমরা মরিয়া হয়ে লড়বো। ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে সেমিতে জয় ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। ইনশাল্লাহ কাউকে হতাশ করব না। জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ব। কোচ লোডডিক ক্রুইফ বলেন, বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে শুক্রবারের ম্যাচের গুরুত্ব অনেক। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, জয় পেতেই হবে। আমিও খেলোয়াড়দের বলেছি দিনটি তোমাদের হতেই হবে। আমার ধারণা ছিল টুর্নামেন্টে বাহরাইন টপ ফেবারিট। সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করেছে থাইল্যান্ড। তরুণ দল হিসেবে ওরা ভালোই খেলছে। কিন্তু এতে আমি মোটেই বিচলিত নই। বাংলাদেশ দলেও ৭/৮ জন তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে। যাদের বয়স ২১ থেকে ২৩। যে গতিময় খেলা খেলছে তা যদি ধরে রাখতে পারে তাহলে থাইল্যান্ডকে ভালোভাবেই হারানো সম্ভব। অন্যদিকে থাইল্যান্ড দলের কোচ চুকা বলেন, বাংলাদেশ যোগ্য প্রতিপক্ষ। তবে ম্যাচ জেতার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। থাই অধিনায়ক পারমাও ম্যাচ জেতার ব্যাপারে আশাবাদী। আজ যারা জিতবে রবিবার মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে।