বৃষ্টি নিয়ে লেখা হাজারো গান, শত শত কবিতা ও গল্প। কোনটা প্রাণের কথা বলে। কোনটায় ভালোবাসার কথা। কোনটায় আবার বেদনার সঙ্গে রয়েছে হতাশাও। বৃষ্টি মানেই উচ্ছ্বাস-উৎসব, আনন্দ-বেদনা; কি নেই, সব আছে। আছে ঠাসা বুননে। দিন কয়েক আগেও বৃষ্টি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ামত। এখন সেটা হতাশার। এতটাই হতাশা এবং বিরক্তকর যে, কথা উঠছে বারবার। কথা উঠছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মপন্থা নিয়ে। এমন ভরা বর্ষায় ক্রিকেট আয়োজন করতে দেখে এখন প্রশ্নবিদ্ধ বিসিবির কর্মকর্তাদের ধ্যান-জ্ঞান। ভারত সিরিজ দিয়ে শুরু। চলছে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও। এমনই ধারায় ঝরছে বৃষ্টি, যে টেস্ট খেলা ভেস্তে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই প্রশ্ন উঠছে বর্ষা মৌসুমে সিরিজ আয়োজন নিয়ে। বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, এই বর্ষা মৌসুম বিসিবির চিন্তা ভাবনায় রয়েছে। সে সঙ্গে রয়েছে ক্রিকেটের কথাও। এফটিপির যে শিডিউল, তাতে ২০২৩ সালের আগে বর্ষা মৌসুমকে এড়ানো সম্ভব নয় বলেও জানান সিইও।
গত বছর জুনে ভারত মাত্র তিনটি ওয়ানডে খেলেছিল ঢাকায়। দুটি হলেও একটি ভেস্তে যায় পুরোপুরি। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল ভরা বর্ষায় খেলা আয়োজন নিয়ে। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছিল বিসিবি। জানিয়েছিল, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের আগ্রহেই হয়েছে সিরিজ। র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দলগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় বাই লেটারাল সিরিজ আয়োজনে। এবারও ঠিক একই অবস্থা।
জুন-জুলাই বাংলাদেশের বর্ষা মৌসুম। দিন-রাত বৃষ্টি হয় ধুমিয়ে। এমন পরিবেশে সিরিজের আয়োজন দেখে অাঁতকে উঠেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু কিছু করার নেই বলে জানান বিসিবি সিইও। সিইও'র মতে, যদি এই সময় সিরিজটি আয়োজন করা না হতো, তাহলে সেটা ২০২৩ সালের পর চলে যেত, 'আমি গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ডের সিইও হারুন লারঘাতের সঙ্গে সিরিজের বিষয়ে কথা বলেছিলাম। তাকে বলেছিলাম, এই সময় আমাদের বর্ষা মৌসুম। অনেক বৃষ্টি হয়। খেলা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শুনে আমাকে বললেন, যদি পেছানো হয়, তাহলে ২০২৩ সালের আগে কোনো শিডিউল পাওয়া সম্ভব নয়। পরে আমরা আলাপ বাড়াইনি।' না বাড়ানোর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিসিবি সিইও, 'সাধারণত র্যাঙ্কিংয়ের উপরের দলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বাই লেটারাল সিরিজ আয়োজনে। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত-এদের আগ্রহকে আগে প্রাধান্য দিতে হয়। আমরা যেমন জিম্বাবুয়ের আগ্রহকে প্রাধান্য দেই না। ওদের অনেক অনুরোধ রয়েছে। আমরা এখনো সেসবে সায় দেইনি।'
ক্রিকেট সিরিজগুলো নির্ধারিত করে দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে। আইসিসি এখন কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। এক সময় করতো। কিন্তু এখন সেটা পুরোপুরি দেশগুলোর হাতে। দেশগুলোর হাতে বলেই সারা বছর খেলা হচ্ছে। কোথাও পাঁচ টেস্ট ম্যাচ সিরিজ। কোথাও তিন টেস্ট, কোথাও আবার দুই টেস্ট সিরিজ। এই নির্ধারণগুলো নির্ভর করে আবার দেশগুলোর চাওয়ার উপর এবং অর্থকড়ির উপর। বাংলাদেশের সিরিজগুলো সাধারণত দুই টেস্টের। তিন টেস্ট ম্যাচের সিরিজ হয়েছে, সেটা কালে-ভদ্রে। যাই হউক, বিসিবি সিইও নিশ্চিত করেছেন, 'অদূর ভবিষ্যতে যখন বাই লেটারাল সিরিজ নিয়ে আলোচনা হবে, তখন নিশ্চিত করেই বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় থাকবে ক্রিকেট বোর্ডের। তবে সেটা নিশ্চিত করেই টেস্ট বিষয়ক।' ওয়ানডে নিয়ে নয়। বৃষ্টি হলেও ওয়ানডে আয়োজনে কোনো সমস্যা হয় না। এবার বৃষ্টি মৌসুমে ওয়ানডে খেলা হলেও সেটা যে শাপেবর ছিল, সেটা বলতে ভুল করেননি বিসিবি সিইও, 'বৃষ্টি হয়তো টেস্ট সিরিজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। ওয়ানডেতে কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি। যদি বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে সিরিজগুলো আয়োজন না করতাম, তাহলে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়গুলো পেতাম না। নিশ্চিত হতো না চ্যাম্পিয়ন্স লিগও। তাই বৃষ্টি যেমন হতাশার। তেমনি আমাদের আনন্দেরও।' ওয়ানডে সিরিজে বৃষ্টি কোনো সমস্যা করতে পারেনি। কিন্তু ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের চলতি টেস্ট পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভেসে গেছে পুরো ছয়দিন। অথচ তিন টেস্টের খেলা ১৫ দিন। ফতুল্লায় ভারতের বিপক্ষে ৪৫০ ওভারের মধ্যে খেলা হয়নি ১৮৫ ওভার। চট্টগ্রামে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্টে খেলা হয়নি ২৩২ ওভার। চলতি টেস্টে এখন পর্যন্ত হয়নি ১৮০ ওভার। আকাশের যে অবস্থা, তাতে বাকি দুদিন খেলা হবে এ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তাই আলোচনার মূলে এখন বর্ষা মৌসুম।