শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও হঠাৎ শেকৃবি ছাত্রদলের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচি ঘিরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সমন্বয়কদের মধ্যে।
সোমবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কর্মসূচি মোতাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শেকৃবি প্রশাসনিক ভবনের সামনে মৌন মিছিল ও স্মরণসভা পালন করেছে শেকৃবি ছাত্রদল। এসময় উপস্থিত ছিলেন শেকৃবি ছাত্রদলের সভাপতি তাপস কবির, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির সহ অন্যান্য নেতাকর্মী। তবে কর্মসূচি পালনের আগে শেকৃবি ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকেও নেওয়া হয় নি অনুমতি।
এর আগে ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে গত ৫ সেপ্টেম্বর সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেকৃবি প্রশাসন।
তবে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের এমন কর্মসূচি ঘিরে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সাদা দল অর্থাৎ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের পরামর্শ ও মৌখিক অনুমতিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রদল এমন প্রোগ্রামের আয়োজন করতে পেরেছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ছাত্র পরামর্শক ড. মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রোগ্রাম করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন ধরণের সমর্থন তারা নেয়নি এবং আমি ব্যক্তিগতভাবেও বিষয়টি অবগত ছিলাম না। এ অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবুল বাশার বলেন, আমাদের কাছে কেউ কোন প্রোগ্রামের অনুমতি নেই নি। আমরা যথা সম্ভব ক্যাম্পাসকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পরিপন্থি হঠাৎ এধরনের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। উপাচার্যের সাথে বিষয়টি নিয়ে বসব।
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে কিছু কুচক্রীমহল ছাত্ররাজনীতি আবার চালু করতে তৎপর। যেই প্রশাসনিক ভবন থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, সেই প্রশাসনিক ভবনের সামনেই ছাত্রদল কর্মসূচি করলো! আমরা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা বিগত দিনগুলোতে দেখে আসছি ছাত্ররাজনীতির নামে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ক্যাম্পাসকে কুক্ষিগত করে হল দখল, ক্যান্টিনে চাঁদাবাজি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, ক্যাম্পাসের বাইরের দোকানের চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীবান্ধব এবং গবেষণামুখী হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
শেকৃবি সমন্বয়ক মোঃ তৌহিদ আহমেদ আশিক বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ এখনো শুকায় নি। আন্দোলনের নয় দফার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল ক্যাম্পাসকে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি মুক্ত করা। সেখানে শহীদ আবরারের মৃত্যুবার্ষিকীকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যারা অপরাজনীতি চালুর পায়তারা করছে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একাজে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ইন্ধনে অথবা যেকোন কুচক্রী মহলের পায়তারাই যারা যুক্ত হয়ে ক্যাম্পাসের আইন ভঙ্গ করেছে তাদেরকে প্রশাসনিক জবাবদিহি করতে হবে।
এ বিষয়ে শেকৃবি ছাত্রদল সভাপতি তাপস বলেন, যে প্রক্রিয়ায় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা বৈধ প্রক্রিয়া না। রুটিন দায়িত্বে থাকা অবস্থয়া যিনি রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছেন, তার এটা এখতিয়ার ছিল না। সুতরাং কোন মাপকাঠিতে রাজনীতি বৈধ না তা আমরা জানি না। আর ক্যাম্পাসের স্টেকহোল্ডার তো শিক্ষক আর গুটিকয়েক শিক্ষার্থী না। ৫০ বা ১০০ জন শিক্ষার্থী ভিসিকে অবরুদ্ধ করে আমি আমার দাবি দাওয়া আদায় করে নিলাম বিষয়টি এমন না। রাজনীতি সবার গণতান্ত্রিক অধিকার, এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে প্রশাসনকে দায়ভার নিতে হবে। আর শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামে স্বেচ্ছায় এসেছে, কাউকে জোর করে ধরে আনা হয় নি।
বিডি প্রতিদিন/এএম