সিদ্ধিরগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ভবনের নিচে থাকা ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, ডক্টর চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ সময় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাদের দেওয়া আগুনে ব্যাংকের ভিতরে থাকা নিরীহ তিনজন কাঠমিস্ত্রি পুড়ে মারা যান। আহত হন ৩৫ পুলিশ সদস্য, চারজন সাংবাদিকসহ শতাধিক লোক। এ ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সহিংসতায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ নাশকতার কারণে টানা কয়েক দিন ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ থাকায় এ লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে কোটা আন্দোলনে জ্বালিয়ে দেওয়া বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিরূপণ করতে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক। সরেজমিনে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের হাজী ইব্রাহিম খলিল শপিং কমপ্লেক্স অ্যান্ড প্রিয়ম নিবাসে দেখা যায়, মার্কেট নয় যেন ধ্বংসস্তূপ। মার্কেটের সাত ও আট তলায় ছিল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি। এ মার্কেটে পুলিশ ফাঁড়ি থাকায় তিনটি ফ্লোর অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুধু অগ্নিসংযোগ করেই থেমে থাকেনি তারা, মার্কেটের দোকান থেকে বাচ্চাদের সাইকেল, গাড়ির ব?্যাটারি, টায়ার এবং ব্যাংকের অভ্যন্তরে থাকা কম্পিউটার, আসবাবপত্র লুটপাট করেছে। মার্কেটের দোকানি সিফা ব?্যাটারি হাউসের মালিক শাহিন বলেন, ‘মৃত্যুর দরজা থেকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন আমাদের। এরা শুধু আমার দোকান থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়নি, কর্মচারীসহ আমিও ওই দিন মারা যেতাম। আমি স্বাধীনতাযুদ্ধে হানাদারদের দেখিনি কিন্তু ওই দিন ওদের ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখেছি।’
হাজী ইব্রাহিম খলিল শপিং কমপ্লেক্স অ্যান্ড প্রিয়ম নিবাসের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা হাবিবুল্লাহ কাঁচপুরী বলেন, ‘এ ধ্বংসযজ্ঞের কারণে আমার মার্কেটসহ ব্যবসায়ীদের প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ক্ষতি কিছুই না। ঘটনার পর আমার নেত্রী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। আমার চাওয়ার আর কিছুই নেই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও যে তিনি আমার খোঁজখবর নিয়েছেন তার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞ।’
পাশের এনএস সুপার মার্কেটের জঙ্গল রেস্টুরেন্টে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। দুর্বৃত্তরা ড্রিমল্যান্ড ব্যাটারি হাউসে শোরুম থেকে গাড়ির ব্যাটারি ও টায়ার লুটপাট করে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ড্রিমল্যান্ড ব্যাটারি হাউসের মালিক এম এ রব। এদিকে মাদানীনগর মাদরাসার পাশের আল আমিন গার্মেন্টে হামলা হয়। এ সময় গার্মেন্টে ব্যাপক ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। পাইনাদী নতুন মহল্লার ফজর আলী গার্ডেন সিটিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। এ মার্কেটের দুটি ইলেকট্রনিক্স শোরুমে হামলা করে কয়েক কোটি টাকার মালামাল লুটপাট করা হয়।
এ ছাড়া শিমরাইল মোড়ের সৌদি বাংলা মার্কেটে ভাঙচুর ও নিরাপত্তাপ্রহরীদের মারধর করা হয়। সানারপাড় রহিম মার্কেট এলাকায় জেলা যুবলীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হাজি সুমন কাজীর ফার্নিচারের শোরুমে ভাঙচুর করে আন্দোলনকরীরা। এ ছাড়া সানারপাড় এলাকায় সাবেক এমপি হাজি সেলিমের একটি গোডাউনে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। পাশাপাশি সাইনবোর্ড মিতালী মার্কেটে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক লুটপাট করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত ৩০টি যানবাহনের চালককে মারধর করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। অন্যদিকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের সিমেন্টের আটটি কংক্রিট মিকচার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ডিপিডিসি অফিসে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বিএসসির বাড়িতে হামলা করে এবং পাশের স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ কার্যালয় ব্যাপক হামলা ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা।