দেড় বছরের আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) দেওয়ার কথা বলে আরিফুল ইসলাম অপুকে (৩৪) সৌদি আরব নিয়েছিলেন দালাল জাকির মিয়া। অপু সাড়ে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দিয়েছিলেন জাকিরের হাতে। স্বপ্ন ছিল সংসারের উন্নতি আর সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সব স্বপ্ন নিভে গেছে দালালের প্রতারণায়।
চলতি বছরের ১৮ জুন সৌদি আরবে মারা যান অপু। পরিবারের লোকজন লাশ আনার জন্য জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আরও ৫ লাখ টাকা চান। টাকা দিতে না পারায় দেড় মাস লাশ পড়ে ছিল সৌদিতেই। অপু কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া হাইধনখালী গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে। তার মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রয়েছে। পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পাশের টামনি পিটুয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী জাকির মিয়া অপুকে প্রস্তাব দেন সৌদি যাওয়ার। জাকিরকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে গত বছরের ১৯ এপ্রিল অপু পাড়ি জমান সৌদি আরবে। কথা ছিল দেড় বছরের আকামা দেওয়ার। তাকে দেওয়া হয় মাত্র ছয় মাসের। আর আকামা না দেওয়ায় অবৈধ হয়ে যান অপু। জাকিরকে আকামা দেওয়ার কথা বললে আরও টাকা দাবি করেন। দরিদ্র অপুর পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। মেলেনি আকামাও। আকামা না হওয়া, দেশে ঋণের বোঝা, সংসারের অভাব-অনটন এসব চিন্তায় মানসিক চাপে ১৮ জুন সৌদি আরবেই মৃত্যুবরণ করেন অপু।
ঘটনা জেনে করিমগঞ্জের বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান রনি তার ফেসবুকে বিষয়টি তুলে ধরেন। ফেসবুকের লেখা নজরে আসে কিশোরগঞ্জের প্রবাসী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন সভাপতি সৌদি প্রবাসী আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অস্ট্রিয়া প্রবাসী শাহরিয়ার আশরাফ টুটুলের।
তারা যোগাযোগ করেন সংগঠনের উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম আকন্দ, আবদুল আওয়াল আঞ্জু, দেশে থাকা আবু বকর সিদ্দিক, দিগদাইড় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সারোয়ার আলম ও ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের সঙ্গে। তাদের সহযোগিতায় সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি অপুর লাশ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। গত শুক্রবার বাড়িতে আনা হয় তার লাশ। দক্ষিণ হাইধনখালী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে গতকাল জানাজা শেষে রামনগর সামাজিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।