মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

মুসা বিন শমসের সমাচার

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

মুসা বিন শমসের সমাচার

সে অনেক দিন আগের কথা। আমার এক পরম হিতৈষী জিগাতলার মহসীন বুলবুল, তার আদি বাড়ি কিশোরগঞ্জে সদরওয়ালা ঈশা খাঁর জঙ্গল বাড়িতে, ঢাকায় থাকতেন সম্রাটের মতো, বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর বন্ধু। কত জায়গায় কত মানুষ দেখেছি, কিন্তু মহসীন বুলবুল ছিলেন একেবারেই অন্য ধরনের। আয়ুববিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন ধানমন্ডি, লালবাগের মুকুটহীন সম্রাট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের তিন তিনবারের ভিপি গোপালগঞ্জের কাজী ফিরোজ রশিদ আর শরীয়তপুরের এম এ রেজা ও মহসীন বুলবুলের নাম তখন অনেকের মুখে মুখে। আমার অনেক হিতৈষী ছিল এবং এখনো আছে, কিন্তু মহসীন বুলবুলের মতো কখনো কাউকে দেখিনি। যতদিন বেঁচে ছিলেন কোনো কিছু বললে কোনো কারণ জিজ্ঞেস করতেন না। কোথায় যেতে হবে শুধু তাই শুধাতেন। তার বিচারে কাদের কোনো অন্যায় বলতে পারে বা করতে পারে- তা ছিল তার ধারণার অতীত। ঠিক মহসীন বুলবুলের মতো আরেকজন আমায় ভালোবাসতেন, তিনি রাজাবাজারের চান খাঁ। আমার থেকে ১৫-২০ বছরের বড় ছিলেন। '৯০-এ দেশে ফেরার পর যশোর, খুলনা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে যাননি। ফজরের নামাজ পড়ে মাঝে-মধ্যে আমার দরজায় কড়া নাড়তেন। কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হলেও তার পাগলামি আমার ভালো লাগত। যদিও কোনো প্রয়োজন ছিল না, তবু কোথাও সভা-সমিতিতে গেলে জোর করে রিভলবার দিয়ে দিতেন। আমার লাইসেন্স করা ছোট-বড় যা বন্দুক দরকার তার সবই ছিল। একটা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এলেও আমার কাছে অস্ত্রের কখনো তেমন কোনো মূল্য ছিল না, আমার কাছে মূল্য ছিল সাহসের, মনুষ্যত্বের। কিন্তু তবু জোর করেই দিতেন। না আনলে অসন্তুষ্ট হতেন তাই নিয়ে আসতাম অথবা বাড়িতে এসে দিয়ে গেলে রেখে দিতাম। কারণ চান খাঁকে সামলাতে পারে অমন ক্ষমতা দয়াময় আল্লাহ কাউকে দেননি। তখনকার সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তাকে সামলাতে পারতেন না। তবে তিনিও তাকে খুব সম্মান করতেন, ভালোবাসতেন।

বছরটা ঠিক মনে নেই, '৯২ সালের প্রথম দিকে বুলবুল ভাই বনানীর এক আদম ব্যবসায়ীর অফিসে নিয়ে যান। সেখানেই প্রথম দেখা বর্তমান আলোচিত মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে। তখনো তার তেমন নামডাক হয়নি। তবে তার জনশক্তি ব্যবসা তখনই তুঙ্গে। মুসা বিন শমসের ফরিদপুরের নগরকান্দার লোক। আগে থাকত জিগাতলায়। আর জিগাতলার একচ্ছত্র নেতা, মুকুটহীন সম্রাট জনাব মহসীন বুলবুল। তাই মহসীন বুলবুলের কাছে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেদিনও মুসা বিন শমসের তাকে ভীষণ সম্মান দেখিয়েছিলেন, আমাকেও অসামান্য মর্যাদা দিয়েছিলেন। তারপর আমার বাড়িতে বেশ কয়েকবার উপহার ও সঙ্গে কিছু কিছু হাদিয়া পাঠিয়েছেন। এরপর আর মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে অনেক বছর কোনো দেখা-সাক্ষাৎ বা যোগাযোগ হয়নি। হঠাৎ একদিন যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লক্ষ কোটি পাউন্ড লেবার নাকি কনজারভেটিভ পার্টিকে চাঁদা দেওয়ার খবর খুব ফলাও করে পত্রিকায় আসে। যদিও মুসা বিন শমসেরের সে চাঁদা তারা গ্রহণ করেনি, কিন্তু আলোচনা যা হওয়ার খুব হয়েছিল। এর পর মাঝে মাঝেই তার ঘড়ি, কলম, জুতা, খড়ম নিয়ে নানা সময় নানা আলোচনা হয়েছে। কয়েক বছর আগে মুসা বিন শমসেরের মেয়ে ন্যান্সী মুসার সঙ্গে শেখ সেলিমের ছেলে শেখ ফজলে ফাহিমের বিয়ে হয়। সারা পৃথিবীতে অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে সে নাকি বিপুল বিত্তের মালিক পর্যন্তই জানা ছিল। কিন্তু এবার দুদক একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙেছে। হঠাৎই বিজনেস এশিয়ার এক খবরের ভিত্তিতে তাকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিস জারি করে। মুসা বিন শমসের দেশে না বিদেশে, কোথায় থাকে খুব একটা খবর রাখি না। কিন্তু সেদিন ৪০ জন নানা রং-বেরঙের, তার মধ্যে আবার চারজন মহিলা নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে দুদকে গিয়েছিলেন। হলিউডের সিনেমাতেও অমন হয় না, যেমনটা তার বেলায় হয়েছে। তাকে নিয়ে আমার কখনো কোনো কৌতূহল ছিল না। কিন্তু এবার সত্যিই দারুণ কৌতূহল জেগেছে। তিনি বলেছেন, সুইস ব্যাংকে তার ৫১ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে সে টাকা মুক্ত হলে পদ্মা সেতু, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ও অন্যদের কল্যাণে ব্যয় করবেন। পত্রপত্রিকায় দেখছি এ পর্যন্ত তিনি নাকি বাংলাদেশের কোথাও কোনো সেবামূলক কাজে ঘষা পয়সাও খরচ করেননি। তাতে কী! আমার এক পরম হিতৈষী, ভীষণ ভালো মানুষ, অনেক টাকার মালিক, আমাকেও ভীষণ ভালোবাসেন। যখন যা চাই তা দিয়ে দলকেও সাহায্য করেন, আমাকেও করেন। কিন্তু সব সময় তার টানাটানি লেগেই থাকে। এক লাখ দিতেও যেমন, ৫-১০ লাখেও তেমন। এখান ওখান থেকে জোগাড় করে অথবা পরে বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দেন। গত ১০ বছর কখনো এর ব্যতিক্রম হয়নি। আবার অন্য এক নবীন হিতৈষী, সম্পদের দিক থেকে হয়তো তার একশ ভাগের এক ভাগও না। কিন্তু তাকে যখন যা বলেছি, মুহূর্তে চেক লিখে দিয়েছে। তার কোনো টানাটানি দেখিনি। সাত-আট বছর আগে একবার বিখ্যাত গায়িকা মমতাজ বিজয় দিবসে গান গাইতে গিয়েছিল। তার চাহিদা চার লাখ। সংসদ সদস্যের প্যাডে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট ৫০ হাজার বুঝিয়া পাইয়া বাকি সাড়ে তিন লাখের কথা লিখে দিয়েছিল। আমি নবীন হিতৈষীকে বলেছিলাম, কী আর করবে? শিল্পীর খরচটা তুমি দিয়ে দাও। মমতাজের চাহিদা চার লাখ, সঙ্গে সঙ্গে চেক লিখে দিয়েছিল। মানুষের টাকা থাকে, অসুবিধাও থাকে। সব সময় হাতে টাকা থাকে না। আমি একবার আসমান থেকে পড়েছিলাম। এক সময়ের এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সুহৃদ আনিসুল হক কী এক প্রোগ্রামে এক লাখ টাকার একটা চেক দিয়েছিলেন। অসম্মান হয়ে চেকটা ব্যাংক থেকে ফিরে এসেছিল। কাকে দিয়ে যেন চেকটা আনিসুল হকের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিলাম, যাকে দিয়ে পাঠিয়েছিলাম সে-ই যাওয়ার পথে আবার ব্যাংকে গিয়েছিল। সেবার চেকটার সম্মান হয়েছিল। এমনটা অনেক ধনবানের ক্ষেত্রেই কম-বেশি হয়।

পাঠকরা হয়তো মনে করেন, আমি অনেক বুদ্ধিসুদ্ধি করে লিখি। সত্যিকার অর্থে খুব একটা কলাকৌশল করে লিখি না। আমার লেখায় চোখে দেখা অভিজ্ঞতা ছাড়া তেমন বেশি কিছু নেই। মা যেমন পরম আদরে বুকে চেপে তার অবুঝ শিশুকে দুধ দেয়, আমিও পাঠকদের জন্য তেমন মনোযোগের সঙ্গে লেখার চেষ্টা করি। মুসা বিন শমসেরের কথায় মুক্তিযুদ্ধের একটি ঘটনা আমার মনে পড়ছে। যুদ্ধের সময় টাকা-পয়সা সংগ্রহ করত স্বেচ্ছাসেবক কমান্ডাররা। মির্জাপুর থানায় এক ভদ্রলোকের পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা ধরা হয়েছিল। চাঁদা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, যদি হেডকোয়ার্টারে গিয়ে দিতে পারতাম তাহলে ৫০ হাজার দিতাম। কদিন পর তিনি ৫০ হাজার নিয়ে হেডকোয়ার্টারে যান। হেডকোয়ার্টারের লোকজনরা জিজ্ঞাসা করে আপনাকে চাঁদা ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার, হেডকোয়ার্টারে এসে ৫০ হাজার দিলেন মানে কী? তার সোজাসাপ্টা উত্তর, চারদিকে যুদ্ধবিগ্রহ, পাকিস্তানিদের কেউ বাধা দেওয়ার নেই। সেই সময় কোথা থেকে এই প্রতিরোধ হচ্ছে সেটা দেখতে পারলে ৫০ হাজার দিতে ক্ষতি কী? টাকা দিয়ে চলে যাওয়ার সময় কী মনে করে আবার বলেছিলেন, সর্বাধিনায়ক বা সিএনসি স্যারের হাতে দিতে পারলে ৫০ হাজারের জায়গায় দুই লাখ দিতাম। এক সপ্তাহ পর আমার হাতে তিনি দুই লাখই দিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় আর কেউ পাঁচ হাজারের ওপর চাঁদা দেয়নি বা আমরাও নেইনি। স্বাধীনতার পর ভদ্রলোক আমার বাড়ি এসেছিলেন। আমিও জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি অমন করেছিলেন কেন? তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধবিগ্রহ, কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। পাকিস্তানিরা মেরে ফেললে, সব নিয়ে নিলে ফেরানোর কেউ নেই। যার ওপর কোনো অধিকারই নেই, তা সময় থাকতে দান করতে অসুবিধা কী? তাই আপনার সঙ্গে দেখা করার বাহানা করে দুই লাখ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন চাইলে ২-৪-১০ হাজারের বেশি দেব? না, কোনোক্রমেই দেব না। মুসা বিন শমসেরের সুইস ব্যাংকের আটকে থাকা ৫১ হাজার কোটির ব্যাপারটাও অনেকটাই তেমন। আটকে গেছে, বাজেয়াপ্তও হতে পারে। হারালে পাওয়া আর মরলে বাবা ডাকা সে তো একই কথা। ওই টাকা আদৌ আছে কিনা কে জানে। কিন্তু প্রচার তো হয়ে রইল। ৫১ হাজার কোটি টাকা শুধু এক ব্যাংকেই আটকে আছে। যার এত টাকা, যার এত ঠাটবাট তার আরও কত কী আছে- মানুষ একটা ধাঁধায় থাকবে। তবে যে জন্য আমার এ লেখা সেটা অন্য ব্যাপার। বিজনেস এশিয়া নামের একটা পত্রিকায় মুসা বিন শমসেরের সুইস ব্যাংকে বিপুল টাকা আটকে আছে এমন একটা খবর শুনে দুদক তার নামে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। মুসা বিন শমসের বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, বিদেশে তার এক পয়সাও বাংলাদেশের নয়। তার সবই সেখানে অর্জিত। তবে কী ডালমে কুচ কালা হ্যায়? দুদক কী কৌশলে মুসা বিন শমসেরের নাম আরও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, নাকি তাকে কলঙ্কিত করছে? আমি বহু বছর ভারতে নির্বাসিত ছিলাম। ভারতের টাটার সারা পৃথিবী জোড়া ব্যবসা। আগে ছিল বিরলা, এখন জিৎপাল, সরাজ পাল, ধীরু ভাই আম্বানীর ছেলে মুকেশ আম্বানী, অনীল আম্বানী, এরা এখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীদের কাতারে। ভারত সরকার বা প্রশাসন কোনো দিন তাদের ছোট করার চেষ্টা করে না।

এই কদিন আগে আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, স্বাধীনতার ফসল নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে নরওয়ের এক বাচাল সাংবাদিকের টেলিভিশন প্রতিবেদনে কত লঙ্কাকাণ্ডই না হয়ে গেল। তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে সরানোর জন্য কত আইনি, বেআইনি কাজ হলো। যে মানুষটাকে আমরা তুলে ধরে আরও অনেক বেশি লাভবান হতে পারতাম। তা না করে পিছু লেগে তার তো কোনো ক্ষতি করতে পারলামই না, বরং আমরা যে পরশ্রীকাতর আধুনিক জামানায় তার একটা প্রমাণ দিলাম। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি নিয়ে কতই না কুরুক্ষেত্র হলো। কত বছর পর আমার দেশে আবার কারবালা হলো, একজন হাসান, আরেকজন হোসেন। মাদারীপুর কালকিনির আবুল হোসেন কত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা করেছেন। একজন সদাহাস্য বিনয়ী মানুষ। চীনের সঙ্গে ভীষণ ভাব তার। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারিতে তিনি তার মন্ত্রিত্ব হারালেন। যখন আবুল হোসেন বলার চেষ্টা করলেন, যে ঘটনা ঘটেনি, যে কাজ শুরুই হয়নি, সেখানে দুর্নীতি হলো কী করে? তখন বলা হলো, দুর্নীতি হয়নি, ভবিষ্যতে হবে তার পরিকল্পনা হয়েছে। কী মারাত্মক কাণ্ড! সেই বাঘের হরিণের ঘাড় মটকানোর মতো ব্যাপার! একই জায়গায় বাঘ আর হরিণ পানি খাচ্ছিল। হরিণ ছিল ভাটিতে। ঘাড় ঘুরিয়ে বাঘ বলল, তুই আমার পানি ঘোলা করলি কেন? তোর ঘাড় মটকাব। হরিণ যেই বলল, আমি কী করে তোমার পানি ঘোলা করব? আমি তো ভাটিতে। বাঘ দেখল তাই তো অজুহাত ঠিক হয়নি। তখন সে বলল, তুই ভাটিতে থাকলে কী হবে, তোর মা-বাবা আগে কোনো দিন উজানে ঘোলা করেছিল। এও যেন ঠিক তেমনি। আবুল হোসেনকে অপমান-অপদস্ত করে কত কিছুই না করা হলো। সেখানে আবার আমার সাদাসিধে ভাতিজা আবুল হাসান চৌধুরী কায়সারকে নিয়ে সে কী টানাটানি। আবুল হোসেন ও আবুল হাসান পুরনো বন্ধু। আবুল হাসান এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা আবু সাঈদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন, হাইকোর্টের জজ ছিলেন, ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তার দাদা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের স্পিকার ছিলেন। এক সময় তাদের দেখা পেলে কত মানুষ ধন্য হতো। সেই আবুল হাসান আবুল হোসেনের কাছে গিয়েছিল তদবিরে। বাঙালির সামাজিক বন্ধন এমন, একে অপরের পাশে না দাঁড়িয়ে এ সমাজে চলা যায় না। এখানে কারও জন্য সুপারিশ করা কোনো অন্যায় নয়, বরং এটাই রীতিনীতি। বিএনপির প্রথম আমল। মেজর (অব.) আবদুল মান্নান তখন বস্ত্রমন্ত্রী। একদিন তার মন্ত্রণালয়ে গেছি। গিয়ে দেখি সিরাজগঞ্জের পাঁচ এমপি সেখানে বসা। মেজর মান্নানের সঙ্গে তখনো আমার কোনো ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল না। আমাকে দেখেই তিনি তরাক করে উঠে পাশের রুমে নিয়ে গেলেন। কথা হলো অনেকক্ষণ। মাননীয় সংসদ সদস্যরা বসেছিলেন, তাই চলে আসতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তিনি ছাড়ছিলেন না। একথা-ওকথা নানা কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। প্রায় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে আমরা বেরিয়ে ছিলাম। তখনো মাননীয় এমপিরা ছিলেন। আমাকে নিয়ে ছোট ঘর থেকে বেরিয়ে মেজর মান্নান বললেন, দেশ স্বাভাবিকভাবে চললে কাদের ভাই মন্ত্রণালয়ে বসতেন, আমরা দেখা করতে আসতাম। আর আজ আমি মন্ত্রণালয়ে তিনি দেখা করতে এসেছেন। আমরা পৃথিবীতে যতদিন থাকব, একে অপরের কথা শুনতে হবে। পরপারে আল্লাহর দরবারে কোনো সুপারিশ চলবে না। সেখানে একজনের আরেকজনের কোনো দরকার হবে না। কিন্তু এ দুনিয়ায় সবার কাছে সবার দরকার। কথাটা ওর আগেও শুনেছিলাম বর্তমান ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির কাছে। ১৩ নম্বর তালকাটরা রোডের বাড়িতে রাত ১০টার দিকে তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। দুজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং দুজন মুখ্যমন্ত্রী তার সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। আমি উঠি উঠি করছিলাম দেখে চা-নাস্তা চেয়ে বলছিলেন, 'আরে বাঘা, বসো তো। উনারা তো প্রতিদিনই আসেন। তোমাকে তো আর সব সময় পাওয়া যায় না। উনারা এসে নিজেরা খুশি হন, তুমি এলে আমি খুশি হই। আরে বসো আরও কিছুক্ষণ। আবার সকালে এসে দিদির সঙ্গে নাস্তা করে যেও।' প্রায় তেমনটাই মেজর মান্নানের মুখে শুনেছিলাম। পরে অনেক ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। ভদ্রলোক আমায় ভীষণ ভালোবাসেন। মুক্তিযুদ্ধের জন্য বঙ্গবন্ধুর পরেই তিনি আমায় সম্মান দেখান। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের সময় মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্র ও পূর্তমন্ত্রী ছিলেন। শুধু তার পূর্ত মন্ত্রণালয়েই মন্ত্রী হিসেবে এক লাখ বাহাত্তর হাজার সুপারিশ করেছিলেন। কানাডার কেউ বলার চেষ্টা করেছে, এরা দুর্নীতি করার স্বপ্ন দেখেছে। কে আবার ডায়েরিতে কার কার নাম পেয়েছে। এখন আমার নাম যদি কারও ডায়েরিতে থাকে সেটা কী আমার দোষ? অমন স্বপ্নীয় অপরাধের একমাত্র স্রষ্টা পরম দয়ালু প্রভু আল্লাহ বিচার করতে পারেন। আমরা কী ভাবি, কী চিন্তা করি। সৎ চিন্তার সৎ ফল, অসৎ চিন্তার অসৎ ফল। কিন্তু এই দুনিয়ায় কোনো কিছু ঘটার আগে ঘটতে পারত বলে বা কেউ চিন্তা করছে বলে তো শাস্তি দেওয়া যায় না, কাউকে ছোট করা যায় না। যেমনটা আবুল হোসেনকে করা হয়েছে, আবুল হাসানকে করা হয়েছে।

লেখক : রাজনীতিক।

 

 

সর্বশেষ খবর