‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে ঈদের পর আবার আন্দোলনে সরব হয়েছে সরকারি কর্মচারীরা। এতে প্রতিদিনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে আজ সচিবালয়ে ৪ নম্বর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কর্মচারীরা। ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ওই ভবনে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়াও আগামী রবিবার কর্মসূচির ঘোষণা আসবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতারা।
গতকাল সচিবালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও একজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার পর সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় কর্মচারীরা সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনের সামনের বাদামতলায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় চত্বর প্রদক্ষিণ করেন। পরে ৬ নম্বর ভবনে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের বরাবরে স্মারকলিপি দেন। পরে ৬ নম্বর ভবনের লিফটের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি মানুষ সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল চায়। ফলে কোনো সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন আমরা মানব না। এখন পর্যন্ত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ডাক পাইনি। যদিও পর্যালোচনা কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ দিতে। তিনি বলেন, কর্মচারীদের দাবি সংবলিত পোস্টার লাগানো হয়েছিল। সেগুলো যারা ছিঁড়েছে সিসিটিভির মাধ্যমে তাদের শনাক্তপূর্বক আমরা তাদের পরিচয় প্রকাশ করব। যার যার জায়গা থেকে পোস্টার ব্যানার লিফলেট তৈরি করে পুরো সচিবালয়ে সাঁটিয়ে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে চোরাবালিতে আটকে ফেলার জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু আমলা এ আইন তৈরি করেছে। আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। যদি আজ দিনের মধ্যে তাদের প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে এমনও হতে পারে বিভাগীয় সম্মেলনের থেকেও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। ঐক্য ফোরামের কো চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই কিন্তু আমাদের বন্দি করে আপনারা শান্তিতে দেশ পরিচালনা করতে পারবেন এটা কি হতে পারে? আমরা হলাম বিল্ডিয়ের ফাউন্ডেশন। যদি ফাউন্ডেশনটাই উপড়ে ফেলেন তাহলে আপনারা কীভাবে কাজ করবেন সে প্রশ্ন রাখেন তিনি। কর্মসূচি ঘোষণা করে নূরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ওই ভবনে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আগামী রবিবার আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। ঈদের ছুটির প্রথম কর্মদিবসে কোনো কর্মসূচি ছিল না। কুশলবিনিময় করে পার করেছেন। দ্বিতীয় কর্মদিবস গত সোমবার থেকে ফের আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। প্রতিদিনই তারা সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। এদিকে, গতকাল বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস) ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ চারটি ধারা সংশোধন/সংযোজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
ঢাকা জেলার প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি দেন বাকাসস সভাপতি হাজী মো. মুসা খান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আশ্রাফুল ইসলামসহ অন্য নেতারা। চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এমন বিধান রেখে গত ২৫ মে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়। এর আগে গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন হয়। ২৪ মে থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনটি প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব সংগঠন সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করে আসছিল।
তারা এ অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে অবহিত করছেন। আইন বাতিল না হলে এ বিক্ষোভ সারা দেশের সরকারি অফিসগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আন্দোলনকারীরা বারবার তাদের বক্তব্যে তুলে ধরছেন। এ পরিস্থিতিতে গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একটি কমিটি করা হয়। কমিটি ইতোমধ্যেই এক দফা সভা করেছে।