ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগে ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান এবং সরকারি-বেসরকারি ২৪টি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদের তথ্যও তলব করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের সব গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। ওই দিনই ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। চিঠিতে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ঢ়ড়এমডিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অনিয়মে জড়িত ১৮ বেসরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দুদক ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ড. ফজলে কবির ও আবদুর রউফ তালুকদার এবং সাবেক ছয় ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে ব্যাংক খাতে একের পর এক বড় ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটে। হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের ভরাডুবি, অগণিত টাকা পাচার সবই সেই সময়ের বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়।
বেসরকারি যেসব ব্যাংকের এমডি, চেয়ারম্যানের দুর্নীতি তদন্ত হচ্ছে : ১৮টি বেসরকারি ব্যাংকও অনিয়মে জড়িয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের অধীন ছয়টি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক এখনো আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছে।
৫ আগস্টের পর যেসব বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), আইএফআইসি ব্যাংক, ইউসিবি, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক (এনআরবিসি), মেঘনা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (বিসিবিএল) এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বোর্ড নিয়োগ পাওয়া আরও তিন ব্যাংক এবি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক তদন্তের আওতায় এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা একসঙ্গে হাত মিলিয়ে টাকা লুট করেছেন। এক ব্যাংকের চেয়ারম্যান যিনি আমার ছাত্র ছিলেন আমার কাছে স্বীকার করেছেন-তাদের ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ ঋণখেলাপি। অর্থাৎ, মালিক ও পরিচালকরা প্রায় পুরো টাকা বাইরে সরিয়ে নিয়েছেন।