ভয়াবহ অর্থনৈতিক ধসের পর ঘুরে দাঁড়াতে শ্রীলঙ্কা এক ভিন্নধর্মী কৌশল গ্রহণ করেছে। একসময় সমুদ্রসৈকত ও ঐতিহাসিক স্থানের জন্য পরিচিত এই দ্বীপরাষ্ট্র এখন পর্যটননির্ভর বিনিয়েগের ওপর নির্ভর করে ক্যাসিনো শিল্পে মনোযোগ দিয়েছে। দেশটির প্রথম মার্ক্সবাদী প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক ভারত ও চীনের ধনী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের ইনডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন অনূঢ়া।
তাঁর ক্ষমতার এক বছর পূর্তির প্রাক্কালে তিনি উদ্বোধন করেছেন ‘সিটি অব ড্রিমস’। এটি রাজধানী কলম্বোর সমুদ্রতটে অবস্থিত একটি বিশাল রিসোর্ট, যা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে প্রথম সমন্বিত ক্যাসিনো রিসোর্ট।
১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই রিসোর্টে আছে ৮০০ কক্ষ, বিলাসবহুল শপিং মল ও সম্মেলনকেন্দ্র। এটি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে শ্রীলঙ্কার জন কিলস হোল্ডিংস ও ম্যাকাওভিত্তিক মেলকো রিসোর্টস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলিউড তারকা হৃতিক রোশনও উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীলঙ্কার সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বছর পর্যটক আগমন ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। এতে গত বছরের ৩.৭ বিলিয়ন ডলার আয় বেড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে। দেশটির পর্যটনমন্ত্রী রুয়ান রানাসিংহে বলেন, স্বল্প মেয়াদে বেশি পর্যটক আনার চেষ্টা চলছে, তবে উচ্চমানের ও টেকসই পর্যটনই তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য।
তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে ক্যাসিনো খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার জিডিপির ৪ শতাংশ পর্যটন থেকে আসে, যা সরকার ১০ শতাংশে উন্নীত করার আশা করছে।
২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি আবার প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশ হবে, যা বিশ্বব্যাংকের অনুমানের চেয়েও বেশি। তবে ২০২৮ সাল থেকে দেশটিকে ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।
২০২২ সালে তারা বৈদেশিক ঋণে খেলাপি হয়েছিল। ‘সিটি অব ড্রিমস’ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী যে এটি নতুন বাজার উন্মোচন করবে। মেলকো রিসোর্টসের চেয়ারম্যান লরেন্স হো বলেন, ‘আমরা এখানে পর্যটন ও ক্যাসিনো খাতের যে সম্ভাবনা, তার সামান্যই স্পর্শ করতে পেরেছি।’
ক্যাসিনো শিল্প নিয়ন্ত্রণে রাখতে শ্রীলঙ্কার সংসদে ‘গ্যাম্বলিং রেগুলেটরি অথরিটি’ আইন পাস হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই আইনে অর্থমন্ত্রীর হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রীয় লটারি তদারকির বাইরে রাখা হয়েছে এবং শাস্তির পরিমাণও খুবই কম। সরকার অবশ্য বলছে, এই আইন শিল্পকে শৃঙ্খলায় আনতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়ক হবে।
পর্যটন শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক আয়ের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস। এবার ক্যাসিনো শিল্প সেই আয়ের নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র : ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ওয়ার্ল্ড