বলিউড বাদশাহ অভিনেতা শাহরুখ খান, এক তপ্ত তরুণের নাম। মধ্য দুপুরের তারুণ্য দিয়ে প্রায় ৬০ বছর বয়সেও বলিউড সাম্রাজ্যকে উত্তপ্ত করে রেখেছেন এই জওয়ান। তিনি নিজের ক্যারিশমাকে শুধু বলিউডের চার দেয়ালের মাঝে বেঁধে রাখেননি। দম দুরস্ত অভিনয় দিয়ে নিজের দেশকে তো কাঁপিয়েছেনই, বিশ্বেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই বলিউড পাঠান। যেমন সম্প্রতি খবর বের হলো, এবার তার নামে আরও একটি কৃতিত্ব নিবন্ধিত হয়েছে এবং তিনিই একমাত্র বলিউড অভিনেতা যাকে নিয়ে এটি হয়েছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিখ্যাত গ্রেভিন মিউজিয়ামে এসআরকে-এর নামে একটি স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে। যেখানে তার ছবি ও নামও ছাপা আছে। এই মুদ্রাটি ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি একজন ভক্ত মুদ্রাটির ছবি শেয়ার করেছেন। যা ইন্টারনেটে ভাইরাল। কিং খানের ভক্তদের গর্বে মন ভরে উঠেছে বলা চলে।
এত সাফল্যের রহস্য কী?
শাহরুখ খানের বয়স প্রায় ৬০ ছুঁইছুঁই। তবে তাকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। শাহরুখ কিন্তু এখনো ‘জওয়ান’। না, কেবল বড়পর্দাতেই নয়, বাস্তবেও বাদশাহর চেহারায় তারুণ্যের ছোঁয়া স্পষ্ট। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেলেছেন তিন দশক। কিন্তু এখনো অনেক তরুণ অভিনেতার চেয়েও ফিট দেখায় শাহরুখকে। ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’-এ শাহরুখের ফিটনেস মুগ্ধ হয়ে দেখেছে অনুরাগীরা। কী করে এ বয়সেও এতটা ফিট তিনি? কোন ডায়েট মেনে চলেন বাদশাহ? শুনতে অবাক লাগলেও দুপুরে এবং রাতে শাহরুখের ডায়েটে নাকি একই খাবার থাকে। দুবেলাই শাহরুখ গ্রিলড চিকেন বা তন্দুরি চিকেন খান। শাহরুখ কখনোই ভাত-রুটি খান না। খাওয়াদাওয়ায় খুব বেশি বৈচিত্র্য না-পছন্দ শাহরুখের। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, ‘আমি খুব সাধারণ খাবার খাই। একাধিকবার নয়, দিনে দুবার খাই আমি। এ বিষয়ে কিন্তু আমি ভীষণ কড়া। শুধু দুপুর আর রাতে খাওয়াদাওয়া করি। আমার ডায়েট থাকে অঙ্কুরিত ছোলা, গ্রিলড চিকেন, ব্রকোলি, ডালের মতো খাবার।’ নো-সুগার ডায়েট মেনে চলেন বাদশাহ। চিনি, মিষ্টিজাতীয় কোনো খাবার ছুঁয়ে দেখেন না তিনি। তবে ডায়েটে কেবল তন্দুরি চিকেন রাখা কি স্বাস্থ্যকর? পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসের ভালোমন্দ দুই দিকই আছে। রোজকার ডায়েটে তন্দুরি চিকেনের মতো উচ্চ প্রোটিন রাখলে পেশিশক্তি বৃদ্ধি হয়, বিপাকহার বাড়ে। এই ডায়েটে পেট সব সময় ভরাট থাকে, ভুলভাল খাবার খেতে ইচ্ছা করে না, তাই ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে এই ডায়েট। অন্যদিকে ডায়েটে ফল, শাকসবজি, কার্বোহাইড্রেট না থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ যায় না। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যাও বেড়ে যায়। তাই ডায়েট করার আগে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তিনি প্রয়োজন বুঝে ডায়েটে সাপ্লিমেন্ট যোগ করতে পারেন।
বলিউড কিং খান শাহরুখ। শুধু দেশেই নয়, সারা বিশ্বে তার কোটি কোটি ভক্ত। নাম, অর্থ, খ্যাতি, মর্যাদা তো আছেই। ভারত সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রীতে ভূষিত তিনি। প্যারিসের গ্রেভিন মিউজিয়ামে তার নামে একটি সোনার মুদ্রা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে তার মোমের মূর্তিও রয়েছে। শাহরুখের নাম লেখা শার্ট, অভিনেতার নাম হাতে খোদাই করে লেখা- এসব প্রতিমুহূর্তে চলতে থাকে। তবে এবার তার নামে মুদ্রা যদি সংগ্রহে রাখা যায়, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না কেউই।
ধনী তারকা
রাজধানী দিল্লির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর জন্ম শাহরুখ খানের। ১৯৮৮ সালে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। নাম করলেন অভিনয়ে। আজ তিনি পৃথিবীর ধনী অভিনেতাদের একজন। তার আয় চলচ্চিত্রশিল্প ও ব্যবসা থেকে। ভারতের গণমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের হিসাবে, শাহরুখ খানের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৭ কোটি ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপির বেশি। সেই হিসাবে তিনি বিশ্বের চতুর্থ ধনী অভিনেতা। তার আগে রয়েছেন জেরি সিনফেল্ড, টাইলার পেরি ও ডোয়াইন জনসন। সম্পদের দিক থেকে শাহরুখ পেছনে ফেলেছেন টম ক্রুজ, জর্জ কুলনি ও রবার্ট ডি নিরোর মতো তারকাদের। ফোর্বসের ২০১৭ সালের ধনী সেলিব্রেটিদের তালিকায় তিনি ৬৫তম স্থানে ছিলেন। তবে ২০২০ সালের পর থেকে শাহরুখ খানের সম্পদ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৩ সাল আর্থিক দিক দিয়ে তার জন্য অত্যন্ত সফল এক বছর। তার ছবি ‘পাঠান’ বক্স অফিসের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সমগ্র পৃথিবী থেকে ‘পাঠান’ এর আয় ১ হাজার ৫০ কোটি রুপির বেশি। এই সিনেমার জন্য ফি নেননি, তবে মুনাফার ৬০ শতাংশ পকেটে পুরেছেন কিং খান। ফলে তিনি একাই ২০০ কোটি রুপির বেশি পেয়েছেন বলে জানায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এরপর এসেছে ‘জওয়ান’।
সংবাদমাধ্যমের খবর, এই ফিল্মের জন্য শাহরুখ খানের ফি ছিল ১০০ কোটি রুপি। শুধু নির্দিষ্ট এই অর্থই নয়, তিনি মুনাফার ৬০ শতাংশ পেয়েছেন। ধারণা করা হয়, ‘জওয়ান’ ভারত ও বাকি বিশ্ব থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি রুপি আয় করেছে। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে মুম্বাইয়ে সুপরিচিত বাড়ি মান্নাত। ২০০১ সালে বান্দ্রার এই বাড়ি তিনি কিনেছিলেন ১৩ কোটি ৩২ লাখ রুপিতে। এরপর এর সাজসজ্জায় নেমে পড়েন স্ত্রী গৌরী খান। সঙ্গে ছিলেন কাইফ ফাকিহ। এটিকে মুম্বাইয়ের অন্যতম সুন্দর বাড়ি বলে মনে করা হয়। হিন্দুস্তান টাইমসের হিসাবে, এই বাড়ির দাম এখন ২০০ কোটি রুপির বেশি। শাহরুখ খানের বাড়ি আছে লন্ডনেও। সেখানকার অভিজাত পার্ক লেনে তার ভিলার দাম ১৮০ কোটি রুপি বলে মনে করা হয়। আর দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ নামের কৃত্রিম দ্বীপে রয়েছে তার আরেকটি বাড়ি। চমৎকার এই ভিলার নাম জান্নাত। হাউজিং ডটকমের হিসাবে, এই বাড়ির মূল্য অন্তত ১০০ কোটি রুপি। এখানেই শেষ নয়, শাহরুখ খান একজন সফল উদ্যোক্তাও। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রোডাকশন কোম্পানি রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট। টফলারের হিসাবে, এই কোম্পানির বার্ষিক আয় কমবেশি ৫০০ কোটি রুপি। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত যে হিসাব টফলার পেয়েছে, তাতে দেখা গেছে কোম্পানির মৌল ভিত্তি আগের চেয়ে শক্ত হয়েছে।
ক্রিকেট ও গাড়ি
ক্রিকেটেও পদচারণ রয়েছে বলিউড বাদশাহর। তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমের অন্যতম মালিক। রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে তিনি এই কোম্পানির ৫৫ শতাংশের মালিক। ফোর্বসের মতে, এই আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) দলের মূল্যমান ১১০ কোটি মার্কিন ডলার।
কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমের বাইরে আরও ক্রিকেট দলে শাহরুখ খানের বিনিয়োগ রয়েছে। এগুলো হলো ট্রিনবাগো নাইট রাইডার্স, আবুধাবি নাইট রাইডার্স ও লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্স। এসব বিনিয়োগের মূল্য ৭৪০ কোটি রুপি বলে ধারণা করা হয়। দামি সব গাড়িও রয়েছে শাহরুখ খানের। রোলস রয়েস ফ্যান্টম ড্রপহেড কুপে, রোলস রয়েস কালিনান ব্ল্যাক, বেন্টলি কন্টিনেন্টাল জিটি, বুগাতি ভেরন, বিএমডব্লিউ ৭-সিরিজ, বিএমডব্লিউ ৬-সিরিজ কনভার্টিবল, ল্যান্ড রোভার, বিএমডব্লিউ আই৮ ও টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার-কিং খানের গ্যারেজে এসব গাড়ির দেখা মেলে।