একজন শিপলুর কথা বলি। শিপলুর বয়স এখন কত? ৩০ পার হয়ে গেছে। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে শিপলু এখন কাজ করে টেলিভিশনে। তবে কোনো টেলিভিশনে চাকরি করে না। শিপলুর জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত গিয়েছে। কিন্তু তাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছে একজন মানুষ। তাকে বাস্তবে দেখেছে সে অনেক পরে। যদিও মানুষটির সঙ্গে তার পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। সেই মানুষটির নাম ম্যাকগাইভার। টেলিভিশনের এক সময়কার দুর্দান্ত জনপ্রিয় এক সিরিজের নায়কের নাম ম্যাকগাইভার। ম্যাকগাইভার দেখে শিপলু জীবনের সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে বড় হয়েছে। উৎসাহ পেয়েছে ম্যাকগাইভারের কাছ থেকে। পড়াশোনা শেষ করে কাজ করেছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। নিজে ম্যাকগাইভারের মতোই কাজ করে যাচ্ছে মানুষের উপকারের জন্য। ৩০-এর কোঠায় শিপলু আমাদের দেশের ১৮ কোটি তরুণের একজন। শুধু শিপলু নয়- এ রকম অসংখ্য তরুণ তাদের জীবন নির্মাণ করেছে টেলিভিশনে দেখা বিভিন্ন চরিত্রের অনুপ্রেরণায়। টেলিভিশন মানে তারুণ্যের জয়। আমাদের দেশে টেলিভিশন সৃষ্টিতে, টেলিভিশনকে দর্শকদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান তৈরির ক্ষেত্রে তারুণ্যেরই জয়জয়কার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম থেকেই এগিয়ে এসেছিলেন তরুণরা। যখন টেলিভিশন সম্পর্কে কারও ধারণাই ছিল না তখন জামিল চৌধুরীর মতো একজন তরুণ ১৯৬৪ সালে যার বয়স ছিল ৩০-এর কোঠায়। টেলিভিশনের পুরো একটা কাচের সেট যেন না ভাঙে খুব যত্ন করে তিনি জাপান থেকে নিয়ে এসেছিলেন বিমানে করে। তরুণেরাই টেলিভিশনে নতুন কিছু সৃষ্টি করে। নতুন স্বপ্ন দেখায়। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রতিষ্ঠিত হয় তরুণদের হাত ধরে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে জামিল চৌধুরী, মুস্তাফা মনোয়ার আবদুল্লাহ আল মামুন, কলিম শরাফী-তারা ছিলেন মনেপ্রাণে সুস্থ সংস্কৃতির ধারক। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যে বয়সে বিখ্যাত হয়েছেন তার কথা ভাবুন। শাইখ সিরাজ, আফজাল হোসেন, হানিফ সংকেত, আবদুন নূর তুষার প্রত্যেকেই তরুণ বয়সে জনপ্রিয় হয়েছেন। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মাধ্যমে যারা জনপ্রিয় হয়েছেন তাদের মধ্যে জিল্লুর রহমান, খালেদ মুহিউদ্দীন, ফারজানা ব্রাউনিয়া প্রমুখ। তখন টেলিভিশনে সব কাজকর্ম হতো বাংলা ভাষায়। তৎকালীন টেলিভিশনের উদ্বোধন করবেন আইয়ুব খান। তাকে বড় গোলাকার একটা ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হবে। সেটা ডিজাইন করেন জয়নুল আবেদীন। বাংলায় মানপত্র লেখেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী। টেলিভিশনে সব বাংলায় হবে- বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি করেন আজকের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তখন তিনি ছিলেন তরুণ। আর সবকিছুর মূলে ছিলেন জামিল চৌধুরী। টেলিভিশনের ইতিহাসে তরুণেরাই নতুন নতুন চিন্তা করেছেন। যদিও এই উপমহাদেশের প্রথম টেলিভিশনের বয়স ৬০ বছর। আর চ্যানেল আই ২৫ বছর পূর্ণ করে ২৬ শে পদার্পণ করেছে। বিশ্বের বেশ কিছু দেশের দর্শকরা চ্যানেল আই দেখতে পায়। সুতরাং এই কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, টেলিভিশন এলেই একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম-তাই তো জনগণ টেলিভিশনকে তাদের বন্ধু হিসেবেই বিবেচনা করে।
এবার থাকবে না কোনো আনুষ্ঠানিকতা : হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করে দেশের প্রথম ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেল আই পদার্পণ করল রজতজয়ন্তী পেরিয়ে ২৬ বছরে। আজ চ্যানেল আইয়ের জন্মদিন। এবারের জন্মদিনে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে কোনো অনুষ্ঠান থাকবে না। তবে চ্যানেল আইয়ের পর্দাজুড়ে থাকবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই পরিবারের সদস্যদের একদিনের বেতন প্রদান করা হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য। চ্যানেল আই বছরজুড়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। শাইখ সিরাজের উপস্থাপনা এবং পরিচালনায় হৃদয়ে মাটি ও মানুষ, মুকিত মজুমদার বাবুর উপস্থাপনা এবং পরিচালনায় প্রকৃতি ও জীবন। তৃতীয় মাত্রা, তারকা কথন, টু দ্যা পয়েন্ট, হোয়াট এ শো। এ ছাড়াও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, নাটক টেলিফিল্ম, চলচ্চিত্রসহ নানা ধরনের বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠান প্রচার হবে।