পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবির অভাবে নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগেই সিনেমা হল বন্ধ শুরু হয়। সে ধারা এখনো অব্যাহত। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দেশে থাকা ১ হাজার ৪৩৫টি সিনেমা হলের স্থলে এখন আছে ৫০টির মতো। চরম লোকসানে আছেন সিনেমা হল মালিকরা। এ অবস্থার উত্তরণ কীভাবে সম্ভব-সে কথাই বলেছেন সিনেমা হল মালিকরা। তাঁদের মতামত তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ
হলের কাঠামো বদলাতে হবে
কাজী ফিরোজ রশীদ (সাবেক সভাপতি প্রদর্শক সমিতি)
পর্যাপ্তসংখ্যক ও মানসম্মত ছবি না থাকায় দর্শক সিনেমা হলবিমুখ। ফলে লোকসানের কবলে পড়ে আমাদের নাকাল হতে হচ্ছে। সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে হলে সিনেমা হলের কাঠামো বদলে ফেলতে হবে। অর্থাৎ আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় গড়ে তুলতে হবে। বিশাল জায়গায় প্রায় হাজার আসনের সিনেমা হল রাখার আর কোনো অর্থ নেই। এখন যা করতে হবে তা হলো- সিনেমা হলগুলো ভেঙে সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করতে হবে। সেই বাণিজ্যিক ভবনে থাকবে দুই থেকে তিন শ আসনের একাধিক সিনেমা হল। কিন্তু সিনেপ্লেক্স নয়, কারণ সিনেপ্লেক্সে ব্যয় বেশি, টিকিটের দামও বেশি। এ কারণে মালিকপক্ষ এবং দর্শক দুয়ের জন্যই তা অনুকূল হবে না। সিনেমা শিল্প টিকিয়ে রাখতে সিনেমা হল পরিবর্তনের বিকল্প নেই।
আধুনিকায়ন দরকার সিনেমা হলের
ইফতেখার নওশাদ (কর্ণধার, মধুমিতা সিনেমা)
যেহেতু পর্যাপ্ত দেশীয় ছবি নেই তাই উপমহাদেশীয় ছবি নিয়মিত আমদানি করতে হবে। হলিউডের জনপ্রিয় ছবি সিনেমা হলে একসঙ্গে মুক্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে সিনেমা হল সময়োপযোগী করে সাজাতে হবে। ১৯৭৬ সালে আমাদের মধুমিতা মুভিজের মাধ্যমে হলিউডের ছবি আমদানি করে এ দেশের সিনেমা হলে প্রদর্শন শুরু করি এবং তা ব্যাপক দর্শকগ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। মধুমিতা সিনেমা হলে ‘টাইটানিক’ ছবিটি টানা ২৮ সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়। একই সঙ্গে সিনেমা হল আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। ইতোমধ্যেই মধুমিতা হলটি সংস্কার করা হয়েছে। মধুমিতায় থাকছে ফুডকোর্ট ও বাচ্চাদের খেলার স্থান। অত্যাধুনিক সিনেমা হল হিসেবে মধুমিতার যাত্রা শুরু হয়। এ উদ্যোগটিই হচ্ছে সিনেমা হলকে ঘুরে দাঁড় করানোর শেষ চেষ্টা।
শিল্পের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে
সুদীপ্ত কুমার দাস (প্রধান উপদেষ্টা, প্রদর্শক সমিতি)
স্থানীয়ভাবে ছবি নির্মাণ কমেছে। চলচ্চিত্র বিনিময়ের ক্ষেত্রে নানা শর্ত আরোপে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। নতুন নীতিমালার অসংগতির কারণে যৌথ প্রযোজনাও বন্ধ রয়েছে। সিনেমা হল উন্নত করতে ৬৪টি জেলায় সিনেমা হল নির্মাণ ও সিনেমা হলের সংস্কারে সরকার প্রতিশ্রুত ঋণ স্বল্প সুদে, সহজ শর্তে ও দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে প্রদান করতে হবে। চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু শিল্পের কোনো সুবিধাই সিনেমা হল এখন পর্যন্ত পায়নি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক হারের পরিবর্তে শিল্প হারে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। সিনেমা হলের জন্য অন্যান্য শিল্প সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশি ছবি নির্দিষ্ট সময়ে দুই দেশে একসঙ্গে মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে সিনেমা হল।
ছবির অভাব পূরণ করতে হবে
মিয়া আলাউদ্দিন (সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রদর্শক সমিতি)
সিনেমা হল বাঁচাতে আগে ছবির অভাব পূরণ করতে হবে। আর ছবি হতে হবে মানসম্মত। সহজ শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণে বিদেশি ছবি আমদানি করতে দিতে হবে। যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা আবার সবার চাহিদা অনুযায়ী প্রণয়ন করতে হবে। সিনেমা হল সংস্কারে শর্তহীন ঋণ দিতে হবে। নতুন সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারে ঘোষিত সরকারি ঋণ সহজ শর্তে দিতে হবে। সিনেমা হলের বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক নয়, শিল্পনীতির আওতায় নিতে হবে। সিনেমা হলে সার্ভারের মাধ্যমে ছবি প্রদর্শন, প্রজেক্টর স্থাপন, সংস্কার ও ৬৪টি জেলায় সরকার ঘোষিত সিনেপ্লেক্স নির্মাণ অচিরেই বাস্তবায়ন করতে হবে। সিনেমা হল সংস্কারের জন্য বিগত সরকারের দেওয়া ১ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের নানা জটিলতায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এ অচলাবস্থা দূর করতে হবে।