বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

অভিযুক্ত পুলিশকে খুঁজে পাচ্ছে না তদন্ত কমিটি

নিভছে সিদ্দিকুরের চোখের আলো

মাহবুব মমতাজী

পুলিশের টিয়ার শেলে আঘাতপ্রাপ্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান আর দেখতে পাবেন না। সারাজীবনের জন্য তিনি অন্ধ হয়ে গেছেন। কিন্তু যে পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে সিদ্দিকুর আজ অন্ধ সেই পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশের তদন্ত কমিটি। আগামীকাল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে গঠন করা কমিটির প্রধান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মীর রেজাউল আলম জানান, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করব। এরপর সেই প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত যা বলার ডিএমপি কমিশনার বলবেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত পুলিশকে চিহ্নিত করা যায়নি। সে কারণে পুলিশের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কীভাবে সিদ্দিকুরের চোখে আঘাত লাগল সেই রহস্যও উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক জানান, এ ধরনের তদন্ত সঠিকভাবে হওয়া উচিত। যাতে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়। হাসপাতালে সিদ্দিকুরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, পুলিশ তার খুব কাছ থেকে টিয়ার শেল ছোড়ে। যার আঘাতে তার চোখ নষ্ট হয়। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

এ ঘটনায় পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা মিলেছে কিনা সে সম্পর্কে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন কিছু বলা যাবে না, কারণ তদন্ত চলছে। আর তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সব জানানো হবে। সোমবার ভারতে চিকিত্সাধীন সিদ্দিকুর রহমানের অস্ত্রোপচারের পরও চোখের আলো ফিরবে না বলে জানিয়েছেন চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ের চিকিত্সক লিঙ্গম গোপাল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর লিঙ্গম গোপাল জানান, অস্ত্রোপচার করেও কিছু হবে না। ঢাকায় অস্ত্রোপচারের পর সিদ্দিকুর রহমান তার ডান চোখে কোনো আলো দেখছিলেন না। বাঁ চোখে একদিক থেকে আলো ফেললে আলোর উপস্থিতি টের পাচ্ছিলেন। বাঁ চোখের অবস্থা কি তা জানতেই সিদ্দিকুরকে চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়।

গত ২০ জুলাই সময়সূচিসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে সিদ্দিকুরের দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) মীর রেজাউল আলম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ ও রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আশরাফুল আলমের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমে কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পরে আরও সাত কার্যদিবস প্রতিবেদন জমার সময় বাড়ানো হয়।

গত ২৪ জুলাই পল্টনের এক অনুষ্ঠান শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক জানিয়েছিলেন, ওই ঘটনায় পুলিশের অতি উত্সাহী কেউ যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে এবং তদন্ত কমিটি প্রমাণ পায়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এও জানান, সাধারণত কাঁদুনে গ্যাস ৩০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উপরের দিকে ছোড়া হয়। এখানে কী সমস্যা হয়েছিল তা দেখবে তদন্ত কমিটি।

সর্বশেষ খবর