আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, নিরপরাধ ব্যক্তিকে ভুয়া ও মামলা বাণিজ্য থেকে পরিত্রাণ দিতে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন অনুমোদন করা হয়েছে। নতুন সংশোধন অনুযায়ী, ভুয়া আসামিরা এখন থেকে প্রাথমিক তদন্তের পরই সংশ্লিষ্টতা না থাকা সাপেক্ষে রেহাই পাবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মুরাদনগরে যে জঘন্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এ ঘটনায় দেশের যে কোনো নাগরিকের মতো সবাই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ভুয়া ও মিথ্যা মামলা করে অনেক ব্যক্তিকে আসামি করে বাণিজ্য করা হয়। এ ব্যাপারে আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কনসালটেনশন মিটিং করে সিআরপিসিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা হত্যা মামলার তদন্তে দুই/তিন বছর লেগে যায়। এই মামলায় শত শত লোককে আসামি করা হয়। যারা আসামি হন তারা দুই-তিন বছর গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকেন। সেজন্য সিআরপিসিতে ১৭৩-এ নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, নতুন বিধানে বলা হয়েছে- পুলিশ কমিশনার, এসপি বা পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তা, তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো মামলার বিষয়ে যদি মনে হয় যে, এটা করা যৌক্তিক; তাহলে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তিনি বলতে পারেন, একটা প্রাথমিক রিপোর্ট দাও। এসপি সেই রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেওয়ার জন্য বলবেন। ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন, এই মামলার মধ্যে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ জনের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই। সাক্ষীও নেই। তাহলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুক্ত করে দিতে পারবেন।
ঢাকায় চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় : ঢাকায় চালু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। আসিফ নজরুল বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক অফিসের (ওএইচসিএইচআর) প্রধান ভলকার টুর্ক বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।
ওএইচসিএইচআর আমাদের জুলাই গণ অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ওপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিবেদন দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সরকারের অনেক দিন ধরে আলোচনা চলছিল। তারা বাংলাদেশে একটা শাখা অফিস খুলতে চান। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদে এ ব্যাপারে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। আমরা কয়েকজন উপদেষ্টা এটা আরেকটু পরীক্ষা করে চূড়ান্ত কপি ভলকার টুর্কের কাছে পাঠাব। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে পারব। এরপরই বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একটা অফিস হবে।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে অফিসটা হবে তিন বছরের জন্য। দ্বিতীয় বছরে যদি দুই পক্ষই মনে করে চুক্তিটা নবায়ন হওয়া দরকার, তাহলে সেটা বিবেচনা করা হবে। আশা করি, আগামীতে বা আমাদের সরকারের আমলেও যদি কোনো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।