ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে উদ্বেগ বাড়ছে রাজনীতিতেও। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ঘোষণার পর মাঠের চিত্র পালটে গেছে। প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্রের মহড়াও দেখা যাচ্ছে। ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের চান্দগাঁও চালিতাতলী এলাকায় নির্বাচনি জনসংযোগের সময় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত সোমবার রাজধানীর পল্লবীতে এবং ১০ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে টার্গেট খুনের শিকার হয়েছেন আরও দুজন।
রাজনীতি এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণ অভ্যুত্থানে লুট হওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ অস্ত্র এখনো উদ্ধার না হওয়ায় অস্ত্র প্রদর্শন ও তার ব্যবহারের প্রবণতা দিনদিন বেড়েই চলছে। পুলিশের লুট হওয়া ১ হাজার ৪০৫টি অস্ত্র ও আড়াই লাখ গুলি এবং বৈধ লাইসেন্সধারীদের জমা না দেওয়া ১ হাজার ৬৫৪টি অস্ত্রও এখন অবৈধ হয়ে অপরাধীদের হাতেই রয়ে গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ অস্ত্রের বড় অংশই সীমান্তপথে আসছে। কিছু অস্ত্র সরকারি বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্রের সঙ্গে মিশে গেছে। নির্বাচনের আগেই এসব নিয়ন্ত্রণে না আনলে নির্বাচনকে ঘিরে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিকরা। যার প্রভাব পড়তে পারে নারী এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের ওপর।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন ঘিরে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন ও শান্তিময় বাংলাদেশ চাই। এখন স্পষ্ট আগুনসন্ত্রাস কারা করে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পদ্মা সেতু থেকে আর মেট্রোরেল প্রকল্পের আত্মসাৎ করা টাকা নাশকতায় ব্যবহার হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতির পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে বিদ্যমান সংস্কৃতি আছে অর্থ এবং শক্তি প্রদর্শন ও অস্ত্র। আমরা দেখছি নির্বাচনের আগে কী হয়। আগের নির্বাচনগুলোতে দেখেছি অস্ত্রের ব্যবহার। দেশে এই মুহূর্তে আনরেজিস্টারড অনেক অস্ত্র আছে সেগুলো তো একটিভ হবে কোনো না কোনো দলের হয়েই। আমি মনে করি যে রাজনৈতিক দলগুলোর এত বছর ধরে চলমান সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে সামগ্রিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র তো বটেই সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ ছাড়া সন্ত্রাসীরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আসছে, এটা বন্ধ করতে হবে। যাতে অস্ত্রধারীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিতে না পারে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুজ্জামান বলেন, নির্বাচনের আগেই যেভাবে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, তাতে তো আমাদের নারী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচনের আগেই এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।