বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর দাতা সংস্থা ও প্রবাসীদের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর বাসভবন যমুনায় বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার (এনজিও) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে বন্যার্তদের সহায়তায় তরুণদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দেশের মানুষকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগসহ দ্রুত মোবাইল যোগাযোগ সচল করার নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসনে অর্থ সংগ্রহ ও সমন্বিত কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে। এ ছাড়া ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অঞ্চল ভাগ করে কাজ করার পরামর্শ দেন এনজিও প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে ব্র্যাকের প্রধান নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রথমত, কীভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে আরও সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করা যায়; দ্বিতীয়ত, যারা যারা কাজ করছেন, তাদের সবার মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করা যায় এবং তৃতীয়ত, কীভাবে অর্থের ব্যবস্থা করা যায়। কেননা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন আছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন তিনি দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। একই সঙ্গে ডোনারদের সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ আছে। আমরা যদি এনজিও সেক্টর, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে আমাদের মধ্যে অনেক বেশি সমন্বয় হবে বলে মনে করছি।’ প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তরুণদের যে প্রেরণা, যে উদ্যোগ এর সঙ্গে একাত্ম হয়ে দেশের মানুষ যেন বন্যার্তদের সহায়তায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, সে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার পরই মূল কার্যক্রম। পানিবাহিত রোগ, খাদ্যের ঘাটতি, ঘরবাড়ি পুনঃস্থাপন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। এনজিওদের সঙ্গে নিয়ে এসব কাজ করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আশু করণীয় হবে দ্রুত যোগাযোগমাধ্যমগুলো সচল করা। আমরা আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ডিজেল পাঠিয়ে টাওয়ারগুলো সচল করা যায়, যতটা সম্ভব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়া যায়, যত দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়। তাহলে দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা যাবে। কেননা ওইসব জেলার বেশির ভাগ মানুষ বিদেশে থাকেন। তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হলে দুর্গতরা সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন।’
বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের প্রধান ফারাহ কবির, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ছাড়াও ছোটবড় ও স্থানীয় ৪৪টি এনজিওর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব পাকিস্তানের : বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। শুক্রবার পাঠানো এই চিঠিতে বন্যায় প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
ড. ইউনূসের কাছে পাঠানো চিঠিতে শেহবাজ শরিফ লিখেছেন, বন্যায় বাংলাদেশের যারা তাদের স্বজন, বাড়িঘর এবং কর্মস্থল হারিয়েছেন, পাকিস্তানের জনগণ তাদের পাশে আছে। বাংলাদেশের জনগণ দুর্যোগের মুখে স্থিতিশীলতার জন্য পরিচিত। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, তারা আপনার দক্ষ নেতৃত্বে এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান। এর আগে গত ১৯ আগস্ট ড. মুহম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছিলেন শেহবাজ শরিফ। সেই চিঠিতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ককে ফের এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।