স্তন ক্যানসার নারীদের মধ্যে একটি সাধারণ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ রোগ। সঠিক সময়ে নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা, নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
স্তন ক্যানসারের লক্ষণসমূহ
স্তন ক্যানসারের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যা আগে থেকেই শনাক্ত করা গেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়। লক্ষণগুলো হলো:
- স্তনে বা বগলের আশপাশে কোনো শক্ত বা মসৃণ গাঁঠ দেখা দেওয়া।
- স্তনের আকার বা আকারে কোনো পরিবর্তন।
- স্তনের ত্বকে গর্ত বা ডিম্পল সৃষ্টি হওয়া।
- স্তনের ত্বক লালচে বা ফোলাভাব হওয়া।
- নিপল থেকে অস্বাভাবিক রস বের হওয়া বা নিপলের আকৃতিতে পরিবর্তন।
- বগলে বা ঘাড়ের পাশে ফুলে যাওয়া গ্রন্থি।
স্তন স্ব-পরীক্ষা : কীভাবে করবেন?
স্তন ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে প্রতি মাসে একবার স্তনের স্ব-পরীক্ষা করা উচিত। এটি আপনার মাসিক চক্র শেষ হওয়ার কয়েকদিন পর করা সবচেয়ে ভালো। যদি মাসিক চক্র নিয়মিত না হয়, তবে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট দিন নির্বাচন করে পরীক্ষা করুন।
১. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখুন: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার হাত দুটো কোমরে রাখুন। স্তনের আকার, আয়তন ও ত্বকের রঙের পরিবর্তন দেখুন। এরপর, হাত দুটো মাথার উপরে তুলুন এবং একইভাবে স্তনের দিকে লক্ষ করুন।
২. হাত দিয়ে অনুভব করুন: হাতের তালুর নিচের অংশ ব্যবহার করে স্তন পরীক্ষা করুন। ছোট ছোট বৃত্তাকার ঘূর্ণন করে স্তনের উপরের অংশ থেকে নিচের দিকে এবং বগল থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত পুরো স্তন অঞ্চলটি পরীক্ষা করুন। উভয় স্তন একইভাবে পরীক্ষা করুন।
৩. শোয়া অবস্থায় পরীক্ষা: একটি বালিশের সাহায্যে ডান কাঁধ উঁচু করে ডান হাত মাথার নিচে রাখুন। বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন। একইভাবে, বাম স্তনের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
যদি কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্তন ক্যানসার হলেও অনেক সময় প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। নিয়মিত ম্যামোগ্রাম ও চিকিৎসকের পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের উপায়
- নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা।
- ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।
- অতিরিক্ত ওজন এড়ানো।
- নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ও চেকআপ করানো।
নিজেকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব নিজের। সঠিক সময়ে সচেতনতা অবলম্বন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললে, স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। সুতরাং, নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। আপনার সচেতনতাই আপনার সুস্থতার চাবিকাঠি!
লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর, মেডিকেল অনকোলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই