কলকাতার রাধা গোবিন্দ (আর.জি.) কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ছাত্রী ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে শনিবারও প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ন্যায়বিচারের দাবিতে শনিবারও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। ওই একই ইস্যুতে মৃত ছাত্রীর রাজ্যটির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নাটাগড়ের বাড়ির সামনেও নারী, পুরুষ ও শিক্ষার্থীর বিশাল মিছিল হয়।
প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে দিল্লিতেও। শনিবার দিল্লির রাজপথে মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ’ (এবিভিপি)। মুখ্যমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করছেন না, অপরাধীদের কেন ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে না- এসব দাবি তুলে দিল্লির হ্যালি রোডে অবস্থিত ‘বঙ্গভবন অভিযানে’র ডাক দেয় এবিভিপি। আর সেই অভিযানকে ঘিরেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি এবিভিপির কর্মী-সমর্থকদের। অন্যদিকে বিচারের দাবিতে খালি গায়ে রাজপথে অভিনব মিছিল করল কংগ্রেস। মিছিল থেকেই উঠল মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের দাবি। এদিন কলকাতার নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে কার মিছিল বের করে কংগ্রেসের মধ্যকলকাতা শাখা। তাদের বক্তব্য ‘একটা উলঙ্গ প্রশাসন চলছে, তাই তার বিরুদ্ধে এই উলঙ্গ প্রতিবাদ। যিনি নিজে একাধারে মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ মন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী- তিনিই আবার ন্যায়বিচার চাইছেন। আমরা ওই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই।’
ঘটনার প্রতিবাদে এদিন দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার (শনিবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর ডাকা এ কর্মবিরতিতে চালু ছিল কেবলমাত্র জরুরি পরিষেবা। বন্ধ ছিল আউটডোর ও অন্য পরিষেবা। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। এমন অবস্থায় চিকিৎসকদের ধর্মঘট তুলে নিতে আহ্বান জানায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আইএমএর দাবি, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে আইন প্রণয়ন করতে হবে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবারই পথে নামেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এদিন বিকালে কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত একটি পদযাত্রায় শামিল হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সঙ্গেই সেই মিছিলে পা মেলান রাজ্যের একাধিক নারী মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক। যদিও মমতার এ আচরণ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তার বক্তব্য ‘নিজের বিরুদ্ধে নিজেই আন্দোলনে নামছেন। অদ্ভুত ব্যাপার! ভারতবর্ষের রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জি এক নিদর্শন তৈরি করলেন।’
এদিকে এখন ভারতে মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে প্রতিবেশি বাংলাদেশেও পথে নেমেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এমনকি মৃতার বাবাকে ফোন করে তার পরিবারের পাশে থাকার বার্তা এসেছে বাংলাদেশ থেকে। ফলে মানসিকভাবে অনেকটাই ভরসা পেয়েছেন মৃতার বাবা। শনিবার তিনি জানান, বাংলাদেশে আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড বন্ধু আছে তিনি আমাকে দুটো ভিডিও পাঠিয়েছিলেন। ফোন করে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমরা আপনাদের পাশে আছি, সাথে আছি। আপনারা চিন্তা করবেন না।’ তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী পাকিস্তান, লন্ডন, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশেই ওই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।