বৃষ্টিস্নাত সকালে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে দ্রোহ, প্রেম, চেতনার কবি ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধ। বৃষ্টির জলে ধুয়ে গিয়ে শ্রদ্ধার ফুলে অনন্য হয়ে ওঠে কবির মাজার। শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত আগমনে ভিন্ন এক রূপ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ-সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধি। শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি মাজার জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করা হয় কবির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায়।
গতকাল সকালে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয় জাতীয় কবির ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণানুষ্ঠানে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা জাতীয় কবিকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত কয়েক দিন আগে এক ভয়ংকর দানবীয় স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছে। সেই আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে আপনারা শুনেছেন ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম মোরা ঝর্ণার মতো চঞ্চল’সহ কবির গণজাগরণের বিভিন্ন গান। এই গানগুলো আন্দোলনকারীদের মাঝে ব্যাপক প্রেরণা ও সাহস জোগায়। আন্দোলনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা আত্মদান করেছেন, তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন নজরুলের গান গেয়ে, নজরুলের গান শুনে। আজও আমাদের অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রেরণা দেন নজরুল।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবির নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম সব যুগে প্রাসঙ্গিক। তাঁর মতো এমন অবিস্মরণীয় কবি বাংলা সাহিত্যে, সংগীতে খুবই কম এসেছেন এবং খুব কম কবিই তাঁর মতো প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছেন। যুগে যুগে যত আন্দোলন হয়েছে সেই আন্দোলনগুলো কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মাধ্যমে শুরু ও শেষ হয়েছে। যতদিন পৃথিবীতে অত্যাচার, অবিচার, অনিয়ম থাকবে কাজী নজরুল ইসলাম ততদিন সবার মনে জাগ্রত থাকবেন। প্রগতিশীল লেখক, কলামিস্ট ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার বলেন, নজরুল আমাদের চেতনার বাতিঘর, আমাদের প্রেরণার উৎস। বৈষম্যহীন সমাজ গঠন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় কবির অবদান এ জাতি চিরকাল মনে রাখবে।
প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় জাদুঘর, নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, নজরুল একাডেমি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সুরসপ্তক, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাঁশরী- নজরুল গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
বাংলা একাডেমিতে কবিকে নিয়ে আয়োজন : বাংলা একাডেমি আয়োজন করে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সকাল ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষের এই আয়োজনে স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন।
নজরুলবিষয়ক একক বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহমুদ শাহ কোরেশী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহা. নায়েব আলী।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুলগীতি পরিবেশন করেন ফেরদৌস আরা এবং ফারহানা শিরিন।