লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ৬৫৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনীতে আড়াই হাজারেরও বেশি পোলট্রি ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তা হয়েছেন নিঃস্ব।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, বন্যায় লক্ষ্মীপুর জেলায় ৬৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৬২টি, মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কলেজের ৮৪টি এবং প্রাথমিকের ৫১৩টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। গতকাল সন্ধ্যায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী বাজার এলাকার তালিমুল কোরআন মাদরাসার জমিসহ তিনটি সেমিপাকা শ্রেণিকক্ষ, অফিস কক্ষ ও শৌচাগার ভেঙে রহমতখালী খালে তলিয়ে যায়। এ সময় নারিকেল গাছসহ বিভিন্ন জাতের ২০টি গাছও তলিয়ে গেছে। মাদরাসাটিতে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টি ভেঙে খালের পানিতে তলিয়ে গেছে। লক্ষ্মীপুর জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিল বলেন, লক্ষ্মীপুরে ১৮৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৮৬টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ইব্রাহিম খলিল আরও বলেন, লক্ষ্মীপুরে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৪৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বন্যায় ৬২টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় ২১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় ৮৪টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল লতিফ মজুমদার বলেন, আমাদের ৭৩২টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২০৪টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বন্যায় ৫১৩টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় আড়াই হাজারেরও বেশি পোলট্রি ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেক খামারির সহায়সম্পত্তি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন শাহাদাত হোসেন। কিন্তু স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মুরগি মারা যাওয়ায় তার প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেন সৌদি আরবে ১২ বছরের প্রবাস জীবন শেষে ২০০৯ সালে দেশে এসে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ধারদেনা, ব্যাংক ঋণ ও নিজের সঞ্চয় করা ৪০ লাখ টাকা দিয়ে একটি পোলট্রি খামার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। রানী অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন জানান, সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে আমার অনেক স্বপ্ন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নেভু লাল দত্ত বলেন, বন্যায় সোনাগাজীতে পোলট্রি খামারিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সবার তথ্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পৌঁছে দেব। সরকার এসব খামারির পাশে দাঁড়াবে।
এদিকে জেলার পরশুরামে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বরাবর প্রায় ১ হাজার পরিবার আবেদন করেছে। আবেদনকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ পরিবারের বসতঘর বন্যায় সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরও রয়েছে অসংখ্য।
এদিকে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বসতঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। জামায়াতের পক্ষ থেকেও বসতঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ইউটিউবার তাসরিফ খান গত বৃহস্পতিবার পশ্চিম অলকা গ্রামের কয়েকটি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
গত ২০ আগস্টের বন্যায় উপজেলাটির প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ ছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলি জমি, পুকুরের মাছ, গরু, ছাগল-হাঁস-মুরগিসহ মূল্যবান আসবাবপত্র হারিয়ে সর্বস্ব হয়েছেন অনেকেই। নিঃস্ব হয়েছে অনন্ত ৪০ হাজার মানুষ।
নদীতে পানি বাড়লেও শঙ্কা নেই : মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীতে পানি বাড়লেও শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ড জানিয়েছে এই মুহূর্তে ভয়ের ও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।
ফেনীতে এখনো পানিবন্দি লাখ মানুষ : ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ আবুপুর গ্রামের কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি রয়েছে। জানা গেছে, এখন জেলার প্রায় ১৫ গ্রামের লাখো মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এসব গ্রামের গ্রামীণ সড়কসহ বাড়িঘর এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। জেলার ৫৫৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০টি ও ৩৫১টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪০টি খুলেছে। জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ দুর্যোগের শিকার হয়েছেন। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, জেলার ২২টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো ৪ হাজারের বেশি আশ্রিত রয়েছে। বন্যায় জেলার প্রায় সড়ক ভেঙে গেছে। পোলট্রি ও মৎস্য খাত সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।