উৎপাদনে ফিরেছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বেশির ভাগ পোশাক কারখানা। তবে এখনো বন্ধ রয়েছে ৫৩টি। শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতিও অনেকটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল সকাল ৮টা থেকে খোলা কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেন। শিল্পপুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো কারখানায় অস্থিরতা দেখা যায়নি। এমনকি সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ৮৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গতকাল বন্ধ ৮৬টি কারখানার মধ্যে ৫৩টি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা বাকি ১৩৩ কারখানার মধ্যে ১২০টি কারখানা চালু হয়েছে। বর্তমানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া কারখানার সংখ্যা ১৩টি ও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ আছে ৩৮টি। এসব কারখানায়ও দ্রুত উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, র?্যাব ও পুলিশের রায়ট কার। গতকাল সকাল থেকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বেশ কয়েকটি কারখানায় কাজ বন্ধ রেখে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন বলে জানিয়েছে শিল্পপুলিশ। শুরু থেকেই শিল্পাঞ্চল সাভার শান্ত ও স্থিতিশীল ছিল। সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যৌথ অভিযানসহ নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে অস্থিরতা কেন থামছে না- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিল্প মালিকরা। তারা বলছেন, বহিরাগত এবং মুখোশধারীরা বিভিন্ন অজুহাতে কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া নিয়ে হাতেগোনা কয়েকটি শিল্পকারখানা কর্তৃপক্ষের ত্রুটি ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। যা গোটা শিল্প এলাকাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। একটি কারখানা থেকে শ্রমিকরা একযোগে বের হয়ে এসে অন্য কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়লে নিরাপত্তাজনিত কারণে ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর : গাজীপুরের মোগরখাল এলাকায় বকেয়া বেতন এবং কারখানা খোলার দাবিতে টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। হামলা ভাঙচুরের আশঙ্কায় পাশের ইকো কুটিউর লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষ বেলা ১১টার দিকে গতকালের জন্য তাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে কারখানাটি বন্ধ দেখে তারা কারখানাটির সামনে বিক্ষোভ করেন।
গাজীপুর শিল্পপুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কয়েক দিন ধরে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। মালিক পক্ষের সঙ্গে বারবার আলোচনা করে বেতন পরিশোধের দাবি জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকরা কারখানা বন্ধ দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পাশের ইকো কুটিউর লিমিটেড কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
এদিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কর্মস্থলে ফিরেছেন শিল্পনগরী গাজীপুরের অন্যান্য পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সকালে দলে দলে কাজে যোগদান করেন তারা। এদিকে, তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। কারখানার নিরাপত্তা রক্ষায় নিজস্ব কর্মী ছাড়াও শিল্পপুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল। সকাল থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি।