তিনটি পৃথক হত্যা মামলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকার আদালত। এ ছাড়া পৃথক দুই হত্যা মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দার এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা ওই তিনটি মামলা হলো- মো. আল শাহরিয়ার হোসেনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলা, অটোরিকশাচালক মো. রনি হত্যা মামলা ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিব হত্যা মামলা। সব মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের যৌথ হামলার অভিযোগ রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে মোহাম্মদ আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
এদিকে পৃথক দুই হত্যা মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল রিমান্ড শেষে ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় রাজ্জাককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ ছাড়া বিএনপির কর্মী মকবুলকে হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে ফারুককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাচান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। পরে তাদের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে আদাবর ও নিউমার্কেট থানার পৃথক দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ ছাড়া গুলিতে মকবুল নামের এক বিএনপিকর্মী নিহতের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত। গতকাল তাদের কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আলী হায়দার তাদের গ্রেপ্তার দেখান। এর আগে গত ৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার ভাটারা থানা এলাকা থেকে সাধন চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। পরদিন গত ৪ অক্টোবর তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন নিম্ন আদালত। এ ছাড়াও গত ৬ অক্টোবর রাতে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত থেকে নারায়ণ চন্দ্রকে আটক করা হয়। তারও আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থেকে দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদের গ্রেপ্তার দেখানো মকবুল হত্যা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর আগে ৭ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশের হারুন অর রশীদ, মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। কার্যালয়ের পাশে থাকা হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালায়। এতে মকবুল হোসেন নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।