কাব্যগাথা ইউসুফ-জোলেখা গ্রন্থের নাম শোনেননি, এমন সাহিত্যপ্রেমী বোধ হয় কমই আছেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, এর রচয়িতা কে? তিনি প্রাচীনতম মুসলিম কবি শাহ মোহাম্মদ সগীর। আনুমানিক ১৩-১৪ শতকের সময় বাংলাসাহিত্যের বিখ্যাত কবি ছিলেন তিনি। ধারণা করা হয়, গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহর রাজত্বকালে (১৩৮৯-১৪১১ খ্রিস্টাব্দ) তিনি কাব্যগাথা ‘ইউসুফ-জোলেখা’ রচনা করেন।
কবি ছিলেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজ-কর্মচারী। ওই সময় তিনি বন্দনা গীতি কবিতাও রচনা করেন। যেখানে বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ফুটে ওঠে। তুলে ধরেন শাসকের স্তুতিও। কাব্যরস পরিবেশন অপেক্ষা ধর্মীয় প্রেরণা সৃষ্টির প্রতি শাহ মোহাম্মদ সগীরের অধিক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। সে যুগে বাংলা ভাষাভাষীদের রম্যরসে ভরা ধর্মকাহিনি রচনা করার মধ্যে কবির সৎ সাহসের পরিচয় মেলে। বাইবেল-কোরআন কিংবা ফেরদৌসী-জামির অনুসরণে কাহিনি-কাব্যটি কল্পিত হলেও বাংলাদেশ ও বাঙালি-জীবনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে। ধারণা করা হয়, কাব্যটি আনুমানিক পঞ্চম শতাব্দীর প্রথম দশকে রচনা করা হয়। ড. এনামুল হকের মতে, কবি শাহ মোহাম্মদ সগীর ইউসুফ-জোলেখার মূল কাহিনি সংগ্রহ করেন ‘কিতাবুল কোরআন’ থেকে। কিন্তু কাব্যটি ধর্মীয় উপাখ্যান নয়, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান যা মানবজীবন রসে সিক্ত। শাহ মোহাম্মদ সগীর মূলত কোরআনে বর্ণিত ইউসুফ-জোলেখাকে নতুন আকৃতিতে মোহনীয় মূর্তি গড়ে তুলেছিলেন।