বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নিজের ২৬তম জন্মদিনে এরচেয়ে ভালো উপহার আর কী পেতে পারেন? বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দলনায়ককে উপহার দিয়েছেন ১০ উইকেটের সোনালি হরফে লেখা ঐতিহাসিক জয়। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়টিকে টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন উৎসর্গ করেছেন ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে নিহতদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪ টেস্টে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। নিজের জন্মদিনে ঐতিহাসিক জয়টি উৎসর্গ করে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমাদের এই জয়টা তাদের উৎসর্গ করছি। তাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া।’ ১৯১ রানের ইনিংস খেলা ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম তার প্রাইজমানির ৩ লাখ রুপি বা ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা দান করেছেন বন্যার্তদের। লিটন দাসও ১ লাখ রুপি বা ৪৩ হাজার টাকা দান করেছেন বন্যার্তদের। ২৬তম জন্মদিন স্বপ্নের জয়টিকে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে চান টাইগার অধিনায়ক, ‘আলহামদুলিল্লাহ। এই জয়টা বিশাল আমাদের জন্য।’
টার্গেট মাত্র ৩০ রান। সময় প্রায় দেড় সেশন। জয়ের কাজটি দ্রুত সেরে নেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। জয়ের জন্য তখন দরকার ৫ রান। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ডট। দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করেন সাদমান। অফ স্পিনার সালমান আগার তৃতীয় বলে প্যাডেল শটে বাউন্ডারি সীমানা পার করেই শূন্যে লাফিয়ে ওঠেন জাকির হাসান। উইকেটের আরেক প্রান্ত থেকে জয়ানন্দে দৌড়ে এসে জাকিরকে জড়িয়ে ধরেন সাদমান। বাংলাদেশের গোটা দল ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয়ে একে অপরকে অভিনন্দনে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। মাঠে দৌড়ে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। হাত বাড়িয়ে অভিনন্দন জানান ম্যাচ জেতানো দুই নায়ক সাদমান ও জাকিরকে। এরপর একে একে চন্ডিকা হাতুরাসিংহেসহ ক্রিকেটাররা মাঠে ঢুকে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে জয়োচ্ছ্বাসে হাত মেলান। পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন একটি জয়ের জন্য ১৪টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। অপেক্ষা করেছে ২০০১ সাল থেকে। ২৩ বছর পর মুশফিকুর রহিম, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজদের আত্মপ্রত্যয়ী ব্যাটিং এবং শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, সাকিব আল হাসান ও মিরাজের বিধ্বংসী বোলিংয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেছে। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ৩০ এপ্রিল-৩ সেপ্টেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে। স্বপ্নের এক জয়ের পর উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
গতকাল ৯৪ রানে পিছিয়ে খেলতে নামে স্বাগতিক পাকিস্তান। বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিকরা। কিন্তু আহামড়ি টার্গেট কিছু দিতে পারেনি। মাত্র ৩০ রানের টার্গেট দিতে পেরেছে। সেটা ৩৯ বলেই জয়টা ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে গুটিয়ে দিয়েছে ৫৫.৫ ওভারে। স্বাগতিকদের সব প্রতিরোধ গুড়িয়ে দেওয়ার নায়ক দুই স্পিনার সাকিব ও মিরাজ। বাঁ হাতি স্পিনার সাকিব খেলছেন অকাশসমান চাপ নিয়ে। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট নেওয়া সাকিব দ্বিতীয় ইনিংসে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন টার্ন ও আর্ম বোলিংয়ে। সাকিবের স্পেল ১৭-৩-৪৪-৩। মিরাজ প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নেন। মেহেদির স্পেল ১১.৫-২-২১-৪। তিন পেসার শরিফুল, নাহিদ রানা ও হাসান একটি করে উইকেট নেন। ৩০ রানের টার্গেটে সাদমান অপরাজিত ছিলেন ৯ রানে এবং জাকির হাসান অপরাজিত ছিলেন ১৫ রানে।
সৌদ শাকিলের ১৪১ ও রিজওয়ানুজ্জামানের অপরাজিত ১৭১ রানে বল করে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। মুশফিকের ১৯১, সাদমানের ৯৩, মুমিনুলের ৫০, লিটনের ৫৬ ও মিরাজের ৭৭ রানে ভর করে ৫৬৫ রান করে বাংলাদেশ। এগিয়ে যায় ১১৭ রানে। চতুর্থ দিন শেষে ১ উইকেটে ২৩ রান তুলে দিন পার করে স্বাগতিকরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে যে ১২টি ম্যাচ হেরেছিল, ২০০৩ সালে মুলতান টেস্ট ছাড়া কোনো টেস্টেই লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনজামামুল হকের অতিমানবীয় সেঞ্চুরিতে ১ উইকেটে জিতেছিল পাকিস্তান। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি ড্র করেছিল তামিম ইকবালের ২০৬ ও ইমরুল কায়েশের ১৫০ রানে ভর করে।