সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক অনবদ্য চরিত্রের নাম। কখনো তিনি ব্যাট-বলে পারফর্ম করে বিশ্বসেরা হয়েছেন। দর্শকদের প্রিয় পাত্র হয়েছেন। বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন দারুণ কিছু জয়ের সুখস্মৃতি। কখনো বা দর্শকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে, নানা অঙ্গভঙ্গি করে বিতর্কের পাত্র হয়েছেন। শেষটায় রাজনীতিতে জড়িয়ে অনেকের চক্ষুশূল হয়েছেন। তবে সাকিব আল হাসান ক্রিকেট ইতিহাসে নিজের পদচিহ্ন স্থায়ী করেছেন বহু আগে। ক্রিকেট পণ্ডিতরা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাছতে গিয়ে কখনোই সাকিবকে বাদ দিতে পারেননি। কেউ বলেছেন সর্বকালের সেরা। কেউ তালিকায় কয়েক ধাপ নিচে নামিয়ে দিয়েছেন। তবে একেবারে বাদ দিতে পারেননি সাকিবকে। সেই সাকিব ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে আছেন। কানপুর টেস্ট শুরুর আগেই জানিয়েছেন, টি-২০ ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে গত বিশ্বকাপে। এবার সাদা পোশাকটাও তুলে রাখতে চান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজে খেলে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন সাকিব। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই আশা পূরণ হবে কি না বলা কঠিন। বিসিবিও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছে। তবে কী কানপুরেই শেষ সাকিবের টেস্ট অধ্যায়?
কানপুর টেস্টটা অবিশ্বাস্যভাবেই জিতে গেল ভারত। ৩০ ঘণ্টার লড়াই শেষ হলো ১৪ ঘণ্টায়। তাও টেস্টটা ড্র করতে ব্যর্থ হয়েছেন নাজমুলরা। গতকাল নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৯৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাত্র ১৭.২ ওভারে ৩ উইকেটে ৯৮ রান করে জয় তুলে নেয় ভারত। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব কোনো উইকেট শিকার করতে পারেননি। তবে প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার শিকার করেন চারটি উইকেট। এর মধ্যে ছিল বিরাট কোহলির উইকেটও। ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য শেষ টেস্টে বিশ্বসেরা ব্যাটারকে আউট করলেন সাকিব। কানপুর টেস্ট তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকল আরও একটা কারণে। ম্যাচের পর বিরাট কোহলি নিজের ব্যাটটা উপহার দেন সাকিবকে। এ উপহার পেয়ে দারুণ আনন্দিত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কানপুরেই সাকিবের শেষ কি না এটা এখনো অজানা। তবে অনেকেই তাকে অভিনন্দিত করেছেন অসাধারণ এক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য। কেউ ফুল দিয়েছেন। কেউ বা সাধুবাদ দিয়েছেন।
সাকিব আল হাসান আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে তার ফেরা হচ্ছে না। তবে এখনো বিষয়টি অমীমাংসিত। ম্যাচের পর সাকিব এক সাংবাদিককে জানিয়েছেন, এখনো বাংলাদেশে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার সাকিব আল হাসানের। ৭১ টেস্ট ম্যাচ খেলে ৪৬০৯ রান করেছেন। উইকেট শিকার করেছেন ২৪৬টি। ৫টি টেস্ট সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে ৩১টি হাফ সেঞ্চুরি। গড় ৩৭-এর ওপরে। বল হাতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ১৯ বার। টেস্টে দীর্ঘ সময় ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তবে কানপুরে নিজের ব্যাটিংটা রাঙাতে পারেননি তিনি। শেষ ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন সাকিব। রবীন্দ্র জাদেজার শিকারে পরিণত হন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চ পা-বের মধ্যে টিকে আছেন কেবল মুশফিকুর রহিম। বাকিরা একে একে বিদায় নিয়েছেন নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সোনালি প্রজন্মের সদস্যদের বিদায় বড় শূন্যতাই তৈরি করবে। তরুণরা সেই শূন্যতা কতটা পূরণ করতে পারেন, তাই দেখার বিষয়!