ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান প্রশাসনিক একমাত্র কর্তাব্যক্তি হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তাদের অনেকেই অনিয়ম, দুর্নীতি, নিযোগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে অপসারিত হয়েছেন।রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করেছেন।
২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শাহিনুর রহমানকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তিনি তার মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। চার বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, এখানে যিনি দায়িত্বশীল ব্যক্তি থাকেন, তার ক্ষেত্রে যেটি বেশি প্রযোজ্য সেটি হলো তাকে সৎ থাকতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। দায়িত্বের প্রতি সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে যারা শিক্ষার্থী তাদের জন্যই তো আমাদের নিয়োগ। ফলেই যিনি কর্তাব্যক্তি হন বা এ ধরনের দায়িত্ব পান তাকে কখনই ভুলে গেলে চলবে না যে আমি একজন শিক্ষক। ফলে শিক্ষার্থীদের যেন উন্নয়ন হয় সেই জায়গাটায় তাকে সব সময় আন্তরিক থাকতে হবে। সেই জায়গায় আমি আন্তরিক থাকার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি যে কোন অসততার সাথে আমি আপোশ করেনি। এ কারনেই আমাকে নানান সময় নানান ভাবে বাধাগ্রস্থ হতে হয়েছে। তবে আল্লাহর অশেষ কৃপায় সেগুলো আমি অতিক্রম করতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে সত্য বের করে সাংবাদিকদের কলম আমাকে সাহায্য করেছে।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি আমাদের শিক্ষক সহকর্মী, কর্মকর্তা সহকর্মী, কর্মচারিসহ সকলের প্রতি যেন সুবিচার হয়, সেটিও আমি লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করেছি। যার প্রেক্ষিতে একটি পদে আসীন হওয়ার পর যেন সেই পদে কেউ আসছে, এটি যেন তার মধ্যে অনুভূত না হয়। তাকে ভাবতে হবে যে সে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য। আমিও সেটি ভেবেছি। যাতে করে আমার কোন শিক্ষার্থী, আমার কোন সহকর্মীসহ এই পরিবারের কোন সদস্য যেন মনে না করে আমি পদধারী ব্যক্তি। ঠিক এই জায়গাটিতে যখন কেউ দাঁড়াতে পারবে আমি মনে করি তার সাফল্য নিশ্চিত। আমি সেটা চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি আমাদের যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিশেষ করে আমাদের শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন শ্রেণী এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরে পাঠদানসহ আমাদের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পুরোমাত্রায় কাজ করতে হবে এবং অন্যকে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। সেই অনুপ্রেরণাম মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গন উন্নত হয় এবং মানসম্মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়।
ড. শাহিনুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ দায়িত্বগ্রহণের পর তাদের সুচারু নেতৃত্বে আমি কাজ করবার চমৎকার একটি পরিবেশ পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল করার জন্য যতগুলো পদক্ষেপ আছে, তার সাথে আমি নিজেকে পুরোমাত্রায় সম্পৃক্ত করেছি। সেই সম্পৃক্ত করার কারনেই আমি কাজ করে আনন্দ পেয়েছি। আজকে যে সফল সমপ্তি বা আমার শেষ দিন। শেষ দিন পর্যন্ত তাদের সাথে কাজ করে আনন্দ পেয়েছি। কারণ তারা সৎ এবং নিষ্ঠাবাদ এবং দুর্নীতিকে তারা না বলে। এই জায়গাটাই আমরা সকলে একই সেন্টিমেন্টে দাঁড়িয়েছি বলেই বিশ্ববিদ্যালয় গতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য এবং সেশনজট মুক্ত চমৎকর একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার জন্য বর্তমান প্রশাসন খুব শক্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমিও সেই টিমের একজন সদস্য। সে কারনেই আমি ভাগ্যবান মনে করি। এভাবেই চলতে থাকলে আমি বিশ্বাস করি আমরা একটি আন্তজার্তিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিতে পারব।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ধৈর্য ও সহনশীলতা আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। আর শ্রেণীক্ষই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দের জায়গা। ক্লাসে গিয়ে আমি সবসময় ছাত্রদের সাথে মিশে যাই।
অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালেয় ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনে ক্যাডার নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবেও থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ইংরেজি বিভাগে সভাপতি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ২ মেয়াদে সভাপিতর দায়িত্বে ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব