জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত এক সাংবাদিক ও ছাত্রীর উপর সন্ত্রাসী হামলার বিচারের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রহসন চালাচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার সকাল ৮টা থেকে 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ'র ব্যানারে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা।
অবরোধ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ, ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখা, সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা।
অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বিচারের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের টালবাহানা ও প্রহসনের প্রতিবাদ জানাতেই তারা এই অবরোধ কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ প্রত্যাহার করবেন না।
এদিকে, সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরাতন দুটি প্রশাসনিক ভবনই অবরোধ করে রাখার ফলে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল এলাকায় বহিরাগত এক তরুণ তরুণীকে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের হাত থেকে রক্ষা করতে গেলে তাদের মারধরের শিকার হন জাবির সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্র ও ছাত্রী। মারধরের শিকার ওই ছাত্র জাবির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী এবং একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
মারধরের শিকার ওই ছাত্র ও ছাত্রী উপাচার্য এবং প্রক্টর বরাবর নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪২তম আবর্তনের ছাত্র নেজামউদ্দিন নিলয় সহ ৬ ছাত্রলীগ কর্মীর নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেন। নিলয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের অনুসারী এবং শাখা ছাত্রলীগের আসন্ন হল কমিটিতে শহীদ রফিক-জব্বার হলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ৪জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় ২রা অক্টোবর। কিন্তু এর দুই দিন পরেই ৪ অক্টোবর সাময়িক বহিষ্কার স্থগিতের নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরপর একাধিকবার বহিষ্কারের জন্য তারিখ দিয়ে বিচারের আশ্বাস দেয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।
সর্বশেষ, ১২ অক্টোবর অভিযুক্তদের বিচারের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন না করায় আজকের অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া, এ ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রশীদ হারুনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ইতোমধ্যেই সেই ১৫ কার্যদিবসও পেরিয়ে গেছে। তদন্ত কমিটির তদন্তের অগ্রগতি ও প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক রশীদ হারুনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় সেটি সম্ভব হয় নি।
এসব বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, "আগামী ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের মিটিং। সেখানে এই ঘটনাটি এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে তাদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ দেয় তবে আমি তাদের সাথে কথা বলতে রাজি আছি।"
বিডি-প্রতিদিন-সালাহ উদ্দীন