দীর্ঘকাল অকার্যকর থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনের অংশ হিসেবে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করতে বৃহস্পতিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের লাউঞ্জে এই বৈঠকটি শুরু হয়। চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। এতে ১৩টি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। পরে বৈঠকের বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
বৈঠকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা আলাদাভাবে তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ডাকসু নিয়ে বেশ কিছু দাবি দাওয়া উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সেক্রেটারিয়েটের সংখ্যা বৃদ্ধি, নারী প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যাকেন্দ্রিক আলাদা সম্পাদকের পদ সৃষ্টির দাবি অন্যতম।
অন্যদিকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রচার, প্রচারণা ও ক্যাম্পাসে সকল সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেন সমান সুযোগ পায় সে বিষয়ে প্রস্তাবনা রাখা হয়।
বাম সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল করা (নিয়মিত) শিক্ষার্থীদের সদস্য রাখা, দীর্ঘদিন পরে নির্বাচন হচ্ছে বিধায় একটি নির্দিষ্ট সেশন পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দান, সভাপতির ক্ষমতা হ্রাস এবং সেক্রেটারিয়েট বডির সদস্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা প্রস্তাবনা পেশ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সময় স্বল্পতার কারণে সকল সংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আজ প্রস্তাবনা রাখা সম্ভব হয়নি। তবে, আগামী সোমবারের মধ্যে তাদেরকে লিখিত প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের অংশ হিসেবে সংবিধান সংশোধন কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সকল সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তাবনা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর সিন্ডিকেট বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা যায়।
এর আগে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে যোগ দিতে বিভিন্ন সংগঠনের শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের চিঠির মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক রহমত উল্লাহ, অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহা ও অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।
ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রলীগের ঢাবি সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রদলের ঢাবি সভাপতি মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস, জাসদ ছাত্রলীগের ঢাবি সভাপতি চন্দ্র নাথ পাল ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাহাত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক তমা বর্মন, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীরসহ ১৩টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাবনা পেশ করেছে। তারা আগামী সোমবারের মধ্যে লিখিত প্রস্তাবনা জমা দেবে। এরপর বিষয়টি আমরা মাননীয় উপাচার্য বরাবর পেশ করব।
ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমরা বৈঠকে আমাদের প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেছি। আমরা চাই সকল সংগঠন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।’
ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের বিষয়ে সনজিত বলেন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী, তাঁরা ক্যাম্পাসে আসছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি তাদের মতাদর্শ গ্রহণ করে নেয় তাহলে তাঁরা ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, কেউ তো তাদের বাধা দিচ্ছে না।
ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, আমরা মনে করতে চাই ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ ছাত্রদল নেতা বলেন, সহাবস্থা্ন নিশ্চিত না হলে আমরা নির্বাচনে অংশ না ও নিতে পারি।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, ডাকসুর বর্তমান গঠনতন্ত্রে সভাপতিকে একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে পদাধিকার বলে সভাপতি (উপাচার্য) নির্বাচিত প্রতিনিধিকে বহিষ্কার করতে পারবে। তিনি যে বিষয়ে চাইবেন সে বিষয়ই আলোচিত হবে। আমরা বিষয়গুলোর পরিবর্তনে প্রস্তাবনা রেখেছি। পাশাপাশি যেহেতু দীর্ঘদিন নির্বাচন হয়নি তাই আমরা একটি নির্দিষ্ট সেশন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বলেছি।
বিডি প্রতিদিন/১০ জানুয়ারি ২০১৯/আরাফাত