মাঝখানে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। দু'পাশে দুটি দেয়াল। একটিতে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের নিদর্শন বন্ধবন্ধুর ৭ মার্চের (১৯৭১) ঐতিহাসিক ভাষণ। অন্যটিতে জাতির পিতার স্বর্ণোজ্জ্বল জীবনলেখ্য। দু’টি কালো দেয়ালের মাঝখানে জাতির পিতার ধবধবে সাদা চেহারাটি সহসাই যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে। দেয়ালগুলোর পেছনে কারুকাজ। দেখানো হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘পিতা তুমি বাংলাদেশ’ মুজিববর্ষ ২০২০ স্মারক ম্যুরালটি শনিবার উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। আর ম্যুরালের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।
‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনার সভাপতিত্বে শম্পা রানী ও আঁখি মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার ডাকে সাড়া দিয়ে বীর বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশ স্বাধীন না হলে আমরা এ ভূ-খণ্ডের বাইরে যেতে পারতাম না। এ দেশে একটি পাসপোর্ট অফিস ছিল না। পাসপোর্ট করতে করাচি যেতে হতো। আজকে এদেশে কতকিছু হয়েছে। এসব কিছু শুধু এ দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে।
জাতির পিতা না হলে এ স্বাধীনতা সম্ভব হতো না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে পারবো সেটা কখনো কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু আজ সেটা সম্ভব হয়েছে। ত্রিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ জীবন দিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিকৃতিকারীরা তুচ্ছতাচ্ছল্য করে বলে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়নি। শত বাধা পেরিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সব সেক্টরে বাংলাদেশ উন্নয়ের রোল মডেলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীরা উঁৎ পেতে থাকে এ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে। দেশকে শান্ত রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের অগ্রণী ভূমিকা অপরিহার্য। তিনি পুলিশ বাহিনীর সবাইকে দেশ, মা-মাটি এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহবান জানান।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এটিই প্রথম প্রোগ্রাম। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাস একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। তাই এ ইতিহাস জনগণকে জানতে হবে। জাতির পিতা ও বাংলাদেশ দুইটি সমর্থক। জাতির পিতা না থাকলে আমাদের এ অবস্থা থাকতো না। আমরা কেউ এত সুন্দর দেশে বাস করতে পারতাম না। তাই আজকে এ দিনে জাতির পিতাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করছি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই আজকে এই আমরা। কাজের মাধ্যমে আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার সাথে যারা কাজ করে তাদেরকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে দেশ ও জনগণ এগিয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার কারণে আজ আমরা এ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারছি। মুক্তিযোদ্ধারা কোনো স্বার্থের দিকে না থাকিয়ে দেশকে ভালবেসে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আপনাদের পুরস্কৃত করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। আপনারা দেশকে স্বাধীন করেছেন বলেই আজ আমরা। আমরা বর্তমান প্রজন্ম আপনাদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা যুদ্ধ করতেছি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে। ১৯৭১ থেকে ২০২০ সাল এই পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ আপনাদের সাথে ছিল থাকবে।
এদিকে, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ ‘চেতনায় ৭১ হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ এর মোড়ক উম্মোচন করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন