ব্রিটিশ যুগে একটি বেদে বহর নোঙ্গর করে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর বাজারের কাছে। ঈশান গােপালপুর বাজারটি ছিল পদ্মা নদীর পাড়ে। মাসের পর মাস ঘাটে নৌকা রেখে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে নাচ - গানের মাধ্যমে বেদেরা সাপ খেলা দেখিয়ে, তাবিজ
বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাে। ঈশান গােপালপুর বাজারের পাশেই ছিল মােড়লের বাড়ি। মােড়ল খবর পায়, তার গ্রামের বেদে বহরে এক অপূর্ব সুন্দরী আছে, যে নাচে -গানে সবাইকে বিমােহিত করে রাখে। মােড়ল লােক পাঠিয়ে সেই বেদে বহরকে তার বাড়িতে গান-বাজনার জন্য আমন্ত্রণ জানায় ।
মােড়ল সাহেবকে গান শুনে আর সাপ খেলা দেখে অনেক টাকা রােজগার হতে পারে এমন আশা নিয়ে বেদে কন্যা চম্পাবতী এবং তার স্বামী গয়া বাইদ্যা সাপের কপি ও দলবল নিয়ে মােড়লের বাড়িতে যায়। কিন্তু চম্পাবতীর রূপে গুণে মােহাচ্ছন্ন হয়ে লােভী মােড়ল তার লাঠিয়ালের জোরে কেড়ে নেয় চম্পাবতীকে।
অসহায় চম্পাবতীর স্বামী গয়া প্রতিবাদ করে, কিন্তু কোনাে কাজ হয়না। গয়া নিরুপায় হয়ে চম্পাবর্তীকে রেখে বেদে দল নিয়ে চলে যায়। গয়া আবার বিয়ে করে সংসারী হয় অপরদিকে চম্পাবতীর বেদে জীবনের উজ্জ্বলতা, হাসি-আনন্দ মােড়লের ঘরে এক আবদ্ধ জীবনে আটকে পড়ে। একসময় মােড়লের কাছে চম্পাবতীর প্রযােজন ফুরিয়ে যায়। বিতাড়িত হয়ে চম্পাবতী আবার ফিরে আসে তার শেকড়ে, তার বেদে জাতির কাছে। কিন্তু গয়া তাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না। অসহায় চম্পাবতী তবুও তার স্বামীর সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু তার একসময় স্থান হয় না সেখানেও। স্বামীর অবহেলা আর গঞ্জনা বুকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় চম্পাবতী। কিন্তু যখন শুনতে পায় তার স্বামী সাপের কামড়ে মৃত্যু শয্যায়, তখনই সব ভূলে স্বামীর কাছে ফিরে আসে। স্বামীর শরীর থেকে সব বিষ চুষে নিয়ে স্বামীকে বাঁচিয়ে জীবনের অবসান ঘটায় চম্পাবতী।
সে সময় গ্রামের প্রভাবশালী মােড়লের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে না পারলেও পল্লী কবি জসীম উদ্দীন প্রতিবাদ হিসেবে ১৯৫১ সালে 'বেদের মেয়ে' নাটকটি রচনা করেন।
১৯৫১ সালে রচিত এই নাটকটির প্রথম পর্ব আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চায়িত হবে সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিটে ও দ্বিতীয় পর্ব রাত ৮.২০ মিনিটে।
সমকাল নাট্যচক্রের ৪০ বছর পুর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুখরঞ্জন সমদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে মঞ্চায়িত হবে নাটকটি। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাুরিজম এন্ড হসপিটালিজ ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদার।
সাজু সরদার বলেন, ফরিদপুর জেলার ঈশান গােপালপুর ইউনিয়নের একটি সত্য-বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে রচিত নাটক “বেদের
মেয়ে”। এই নাটকে যেমনি গ্রাম বাংলার হাজার বছরের কৃষ্টি সংস্কৃতির একটা প্রবহমানতা রয়েছে তেমনি বেদে কন্যা চম্পাবতীর জীবনের করুণ পরিণতির চিত্র উঠে এসেছে। একইভাবে নারীর প্রতি পুরুষের অবজ্ঞা-বঞ্চনা এবং আত্মহুতির মধ্য দিয়ে নারীর অকুণ্ঠ ভালােবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন