রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ না হলে তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ‘নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ঐক্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’র ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির মতিহার হলে ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীকে নির্মম নির্যাতন ও টাকা ছিনতাই, বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে এ মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে বিশিষ্ট গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নকীব বলেন, শিক্ষাঙ্গনের এই চলমান সমস্যাগুলো এক অর্থে রাজনৈতিক। কিন্তু আমরা যেটাকে রাজনীতি বলি, সেটা প্রকৃত অর্থে রাজনীতি না। রাষ্ট্র থাকলে রাজনীতি থাকবে। কিন্তু রাজনীতির একটা মৌলিক উপাদান হচ্ছে কল্যাণকামীতা। রাজনীতি একটা দারুণ জিনিস, যদি তার ভিতরে কল্যাণকামীতা থাকে। আর কল্যাণকামীতা থাকতে হবে সকলের জন্য। কিন্তু আমরা এই জায়গাটার অভাববোধ করছি। আমরা বর্তমানে যেটাকে রাজনীতি বলছি, সেটা স্বাভাবিকভাবেই অপরাজনীতি, ভণ্ডামি, জঘন্য ধরনের সিন্ডিকেটবাজি এবং মাফিয়াবাজি। এটারই চর্চা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে। শিক্ষকরাও এর বাইরে না।
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের একদল গুণ্ডাকে আমি বলব লালন করা হচ্ছে। লালন করার কথাটা বলব এজন্যই যে তাদেরকে যদি লালনই না করা হতো, তাহলে বছরের পর বছর একই ধরণের নৈরাজ্যকর, নৃশংস কর্মকাণ্ড কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছে! কেন প্রতিমাসে, প্রতি সপ্তাহে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নির্যাতন, ছিনতাই এবং হয়রানির মতো জঘন্য ঘটনাগুলো সংবাদপত্রে দেখতে হচ্ছে! আর সংবাদপত্রেই বা আমরা কয়টা দেখতে পাচ্ছি? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করার পর ঘটনাটি প্রকাশ করলে তাকে আবরার ফাহাদের মতো মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সেই ছেলেটি সাহস করেই এটা প্রকাশ করেছে। এরকম সাহস আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়জন দেখাবে! আমরা আইসবার্গের শুধু মাথাটা দেখতে পাচ্ছি, এর ভিতরে কিন্তু আরও বেশি নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে। কিন্তু আমরা এটা চলতে দিতে পারি না।
আরবী বিভগের অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ বলেন, যে শিক্ষার্থীটি মোবাইল সার্ভিসিং করে নিজের পড়াশোনা খরচ জোগানোর পাশাপাশি তার পরিবারকে সহযোগিতা করত। সে শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ আজ বুয়েটের আবরারের মতো মেরে ফেলার হুমকি দিতে সাহস পায়। আমি অত্যন্ত লজ্জিতভাবে বলছি সামছুল ইসলামের নির্যাতন-নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুলে ক্লাস নেয়। গতকালকেও সে ক্লাস নিয়েছে। আমরা এজন্য ধিক্কার জানাই। আমরা অবিলম্বে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই ছাত্রলীগের গুণ্ডারা না পারে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে, না পারে তাদের সংগঠনকে সাজাতে। তারা একটাই কাজ করতে পারে সেটা হলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার কেড়ে নিতে। বর্তমান সরকারিভাবে সারাদেশে শোকের মাস পালন করা হচ্ছে। আর আজকে সরকারি সংগঠনগুলো একযোগে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ও সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার ও আখতার হোসেন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর, রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন, রাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নাইমুল ইসলাম, রাবি শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না প্রমুখ।#
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ