যেকোন দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণে সেদেশের জনসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী। এ বিশাল সংখ্যাক জনসংখ্যাকে শিক্ষার আলো ও কর্মস্থল থেকে দূরে রেখে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) একটি অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা হলো লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং সকল নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। আমাদের দেশে এসব ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। দেশের সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে পুরুষদের প্রাধিকার দেয়া হয়।
তবে ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দেখা গেছে এর ব্যতিক্রমী চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেকই নারী। দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে সমান সংখ্যক হল। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তিচ্ছু নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভাগ ভিত্তিক অর্ধেক আসন পূর্ব থেকে বরাদ্দ রাখা হয় বলে জানা যায়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাই বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, '২০২১ ও ২০২২ সালে বিভিন্ন বিভাগে মোট ৫৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ শিক্ষক ছাড়া বাকি ৩৭ জনই নারী।' নারী শিক্ষকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের চাইতে ছাত্রীরা ভালো রেজাল্ট করছে। তাছাড়া যোগ্যতায় এগিয়ে থাকার কারণে ছাত্রীরা শিক্ষক হওয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষক হওয়ার দৌড়ে ছাত্রীরা এগিয়ে থাকার কারণ সম্পর্কে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, 'বিগত কয়েক বছরে দেখছি, নারীরা শিক্ষকতায় বেশ ভালো করছে। এটা হতে পারে তাদের রেজাল্ট ভালো হওয়ার কারণে হচ্ছে। আমার বিভাগেও ছাত্রীরা রেজাল্টে এগিয়ে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, ছাত্ররা তাদের কিছু সময় বাইরে নষ্ট করছে কিন্তু ছাত্রীরা পড়াশোনা করছে। তবে এটা নিয়ে স্টাডি করা যেতে পারে।'
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'নারী বা পুরুষ হোক যোগ্যতায় এগিয়ে থাকলে তারাতো শিক্ষক হবেই। এখানে কোন অগ্রাধিকার দেয়া হয় না।'
তিনি আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়পর অনেকগুলো বিভাগে রেজাল্টে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানে মেয়েরা রয়েছে। তাছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সমান চোখে দেখা হয়।'
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন