সিলেটের কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান আশ্রয়স্থল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, দালালদের দৌরাত্ম্য এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় সাধারণ মানুষ পূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ওসমানী হাসপাতালের এই অব্যবস্থাপনা, দুর্ভোগের চিত্র ক্ষুব্ধ করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. এ কে আব্দুল মোমেনের স্ত্রী সেলিনা মোমেনকে। গতকাল রবিবার বেলা ১টার দিকে ওসমানী হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক পরিচয়েই হাসপাতালে যান তিনি।
জানা গেছে, রবিবার বেলা ১টার দিকে ওসমানী হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে (জরুরি বিভাগ) যান সেলিনা মোমেন। কিন্তু তাকে জানানো হয়, ইমার্জেন্সি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অবাক হন সেলিনা মোমেন। তিনি তখন জানতে চান, ইমার্জেন্সি তো সবসময়ই খোলা থাকবে, এটা আবার বন্ধ হয় কি করে।
পরে সেলিনা মোমেন ১০ টাকার টিকেট কেটে সাধারণ মানুষের লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসক দেখাতে যান। কিন্তু চিকিৎসকের কক্ষে দায়িত্বরতদের তিনি আড্ডা ও খোশগল্পে মশগুল থাকতে দেখেন।
ওসমানী হাসপাতালের হৃদরোগ, গাইনিসহ বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন ও রোগীদের সাথে কথা বলেন সেলিনা মোমেন। এ সময় তিনি অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশ ও নানা অব্যবস্থাপনা প্রত্যক্ষ করে ক্ষুব্ধ হন। এছাড়া এক্সরে, প্যাথলজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষার (টেস্ট) জন্য সাধারণ মানুষকে বাইরে পাঠানো হচ্ছে, এমনটাও দেখতে পান তিনি।
ক্ষুব্ধ সেলিনা মোমেন পরে নিজের আসল পরিচয়ে ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকের সাথে দেখা করতে তার কক্ষে যান। তবে পরিচালক ছুটিতে থাকায় উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায়ের সাথে দেখা করেন তিনি। এ সময় হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, অপরিচ্ছন্নতা প্রভৃতি বিষয়ে উপপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সেলিনা মোমেন। তিনি বলেন, সরকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে, কিন্তু ওসমানী হাসপাতালে এসে মানুষ কেন এর সুফল পাবে না।
তখন উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় জানান, রোগী বেশি থাকায় হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। আর হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে রোগীদের বাইরে টেস্ট করাতে হয়।
তবে উপপরিচালকের এমন জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সেলিনা মোমেন। তিনি হাসপাতালে জনবল সংকট থাকলে তা কাটানোর পরামর্শ দেন। হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতেও বলেন তিনি। এছাড়া কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান সেলিনা মোমেন।
এ বিষয়ে সেলিনা মোমেন বলেন, ‘ওসমানী হাসপাতাল সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। সাধারণ মানুষ এখানে অনেক আশা নিয়ে সেবা নিতে আসেন। কিন্তু তারা সবসময় সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছেন না। আমি হাসপাতালে গিয়ে অব্যবস্থাপনা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখেছি। বেলা ১টায় গিয়ে দেখি ইমার্জেন্সি বন্ধ। এটা তো কোনোভাবেই বন্ধ থাকার কথা নয়। এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি, সমস্যার সমাধান করতে বলেছি।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল