আমের ভরা মৌসুম চলছে। চলতি বছর রাজশাহী অঞ্চলে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ২০০ টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬ হাজার, নওগাঁয় ৫০৫ এবং নাটোরে উৎপাদন হয়েছে ১৫ টন। চলতি বছর আমের রপ্তানি মৌসুম শুরু হলেও রাজশাহী অঞ্চল থেকে তেমন রপ্তানি হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৬৪ টন। আর নওগাঁ থেকে রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৪ দশমিক ৮ টন। অর্থাৎ চলতি বছরে আম রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৬৮ দশমিক ৮ টন। ফলে এবারও বিপুল পরিমাণ আম থেকে যাবে রপ্তানির বাইরে।
কৃষি বিভাগ জানায়, আম রপ্তানিতে সরকারিভাবে ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যার উদ্দেশ্য মানসম্মত আম উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা। প্রকল্পের অধীনে কৃষকদের উন্নত কৃষি পদ্ধতি, রোগ ও পোকা-মাকড়ের ব্যবস্থাপনা এবং ভালো জাতের আম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে এত অর্থ খরচের পরও মিলছে না সাফল্য।
রাজ-চাঁপাই এগ্রো ফুড প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, ‘নানা কারণে আম রপ্তানি করা যায় না। আম রপ্তানির মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর আগে আমরা ৩-৪ হাজার মেট্রিক টন আম পাঠিয়েছি, এবার মাত্র ৫০০ মেট্রিক টন বিদেশে যাবে। আমার কাছে যে তথ্য আছে, এ বছর আম রপ্তানি এখনো শুরু হয়নি।’ বাঘা উপজেলার রপ্তানিকারক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আম বিদেশে পাঠানো এখনো শুরু হয়নি। এবার হবে বলেও মনে হচ্ছে না। আমাদের কত লোকসান হলো, সেটা আর কী বলব?’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, রপ্তানিতে স্বাস্থ্য সনদ (ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট) প্রয়োজন হয়। অনেক সময় এসব সনদ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও বিলম্ব হয়। পর্যাপ্ত হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট না থাকাও একটা বড় সমস্যা। ইউরোপসহ অনেক দেশ আমদানি করার আগে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট চায়, যা দেশে শুধু ঢাকাতেই আছে। এ কারণে চাষিরা কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইয়াছিন আলী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ৬৪ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করেছি। ঈদের ছুটিতে রপ্তানি না হলেও আবার শুরু হবে।’ রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, রাজশাহী থেকে বিদেশে আম রপ্তানি এখনো শুরু হয়নি। ঈদ ও অনিয়মিত বৃষ্টির কারণে দেরি হচ্ছে। তবে এবার চীনে আম রপ্তানি হবে। তিনি আরও বলেন, রাজশাহী থেকে আম রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। এর কারণ নিজস্ব কার্গো বিমান নেই।
এদিকে, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, এবার ৫ হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রপ্তানির কয়েকটি ধাপ আছে। এর মধ্যে রাজশাহী থেকে ঢাকায় যেতেই ১০ শতাংশ আম নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি কার্গো ভাড়াও বেশি। কার্গোতে স্থান না পাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যাও আছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে।