৯ জানুয়ারি, ২০২০ ১০:০৬

বিশ্বনাথে কৃষাণ-কৃষাণীর 'রুট পিঠা'

সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ (সিলেট):

বিশ্বনাথে কৃষাণ-কৃষাণীর 'রুট পিঠা'

এক সময় গবাদি পশুই ছিল কৃষি ও কৃষকের প্রাণ। আর এ কারণেই অগ্রহায়ণ মাসে নবান্নের পর গবাদি পশুদের কল্যাণে কৃষকের ঘরে ঘরে তৈরি হতো ঐতিহ্যে'র ‘রুট পিঠা’। কৃষাণ-কৃষানীরা সুস্বাদু এ পিঠা তৈরি করে বিলিয়ে দিতেন পড়শীদের মধ্যে। এটি উৎসর্গ করা হতো নিজেদের গবাদি পশু সুরক্ষার উদ্দেশ্যে। যাদের খাটুনিতে গোলায় উঠতো ধান, তাদের রোগ-বালাইহীন-সুস্থতার জন্যেই এ আয়োজন। বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে কৃষির চিত্র পাল্টে যাওয়ায় বিলুপ্ত প্রায় সেই ‘রুট পিঠা’ উৎসব। কৃষিতে গবাদি পশুর ব্যবহার না হলেও, এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।

বুধবার সন্ধ্যায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের নিহালের নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের মতোই কৃষাণ-কৃষাণীরা মিলে পিঠা তৈরির আয়োজন করেছেন। বাড়ির উঠোনের কোণে প্রস্তুত রয়েছে অস্থায়ী লম্বা চুলা। পাশেই জ্বালানি হিসেবে আছে খড়ের স্তুপ। আগুন পোহাতে শিশুদের জটলা। কৃষাণীরা ব্যস্ত নতুন ধানের চালের গুড়ো’র সাথে হলুদ, পিয়াজ, আদা ও ঘি’র মিশ্রণে বড় বড় গোলাকার পিঠা তৈরিতে। পিঠা তৈরি হলে চুলায় দেয়া হয় খড়ের আগুন। চুলার উপরের টিনে রেখে দেয়া হয় পৃথক ভাবে একসাথে তিনটি পিঠা। কিছু সময় অগুনে সেদ্ধ হয়ে একটু কালচে হলেই চুলা থেকে নামানো হয়। এগুলোকে চাকু দিয়ে পরিস্কার করে কেটে করা হয় ছোট ছোট টুকরো। পরে আবারো ঘি মেখে বিলিয়ে দেয়া হয় সবার মাঝে। ‘রুট পিঠা’র ছোট ছোট হলদে টুকরো উঠোনে বসে পড়শীরা সকলেই উৎসবের আমেজে মুখে দেন।

প্রবীণ কৃষক মাসুক আহমদ বলেন, অগ্রহায়ণ মাসে এ উৎসব আমাদের ঐতিহ্য ছিল। এ উপলক্ষেই পাড়ার হিন্দু-মসুলিম সকলেই আমরা একসাথে জড়ো হতাম। ধান তোলার পরিশ্রমের পর একটু শারীরিক প্রশান্তি, গল্প-আড্ডা হতো। এতে বৃদ্ধি হতো পারস্পরিক সম্প্রীতি-সখ্যতা।  
  
গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে জানান, আমরা ছোটবেলা থেকে এর প্রচলন দেখছি। আমার মা-বাবাও এটি করতেন। যদিও কৃষিতে এখন গবাদি পশুর ব্যবহার অনেকটাই অনুপস্থিত, তবুও আমরা এ উৎসব ধরে রেখেছি। কারণ এখনও গবাদিপশু পালনে আমরা অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করি।   

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর