প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম। ৬ নং সতর্ক সংকেত দেওয়ার পর সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), জেলা সিভিল সার্জন, ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাগুলো একাধিক বৈঠকও করেছে। নগর-উপজেলায় চলছে সতর্কতামূলক মাইকিং। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নগরবাসীর সহযোগিতায় প্রস্তুত আছে নগর পুলিশ।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘ফণী চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ৫৬ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এটি যেকোন সময় উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্রস্তুত করা হয়েছে পাঁচ লক্ষ মানুষের ধারণ ক্ষমতার ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩ লক্ষ মানুষের ধারণ ক্ষমতার দুই ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র। ত্রাণসামগ্রী মজুদ আছে আট লাখ ৮৪ হাজার টাকার, ত্রাণের চাল আছে ২২৭ মেট্রিক টন, ঢেউটিন আছে ৭০০ বান্ডিল, শুকনো খাবার আছে ৬ হাজার ৫০০ প্যাকেট, সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক আছে ৬ হাজার ৬৬০ জন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল মজুদ রেখেছে ৫০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং সংগ্রহ করা হচ্ছে আরো এক লক্ষ পিস। মজুদ রাখা হয়েছে এক হাজার ৪০০ পিস হাইজিন কিডস। সচল রাখা হয়েছে টিউবওয়েলগুলো।
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সামগ্রীক প্রস্তুতি আছে। খোলা হয়েছে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। জনগণকে সতর্ক করতে সর্বত্র মাইকিংও করা হয়েছে। সকল উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলাসহ সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সম্ভাব্য এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবারও মজুদ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস যন্ত্রপাতি। সেনাবাহিনী, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরাও প্রস্তুত। প্রস্তুত রেড ক্রিসেন্টের ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং বিএনসিসি ও স্কাউটের সেচ্ছাসেবকগণ। বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম-কুমিরা ঘাট। জেলার প্রাণি সম্পদ রক্ষায় ওষুধ ও খাবার মজুদ এবং সংরক্ষণ, প্রয়োজনে পশুপাখি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা স›দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, বাশখালী ও আনোয়ারায় বিশেষভাবে সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করেছেন জেলা সিভিল সার্জন। এর মধ্যে ১৪ উপজেলায় ৫টি করে ৭০টি, ২০০ ইউনিয়নে ১টি করে মোট ২০০টি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি এবং নগরে আরও ৯টি আরবান ডিসপেনসারি টিম গঠন করে তাদের প্রস্তুত রাখা রাখা হয়েছে। প্রতিটি টিমে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট মিলিয়ে তিনজন করে সদস্য রাখা হয়েছে। মোট ৮৫২ জন টিমের সদস্যকে সম্ভাব্য দুর্যোগসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের সকল প্রস্তুতি আছে। চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ ছাড়াও ৯ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ এবং সাড়ে ৪ লাখ ওরস্যালাইনও মজুদ আছে। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।’
চসিক সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চসিক। সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় নগরবাসীকে সহায়তা করতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে করা হয়েছে মাইকিং। রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও স্যালাইন।
চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাতটি মেডিলেক টিম। দূর্যোগকালীন ও দূর্যোগপরবর্তী সময়ে রাস্তাঘাট পরিস্কার রাখতে চসিকের ৪ হাজার শ্রমিক, পর্যাপ্ত গাড়ী এবং রেড ক্রিসেন্টের ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক কর্মী থাকবেন। তাছাড়া রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি এবং চিকিৎসায় চমেক হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও চসিক জেনারেল হাসপাতাল খোলা রাখা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুওসুদ্দী বলেন, ‘প্রাকৃতি দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি আছে। সব সদস্যকে তাৎক্ষণিক কাজ করার মত করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার