চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীর ৩৩ কিলোমিটার সাগর তীরে অবস্থিত। এর মধ্যে মাত্র ৯ দশমিক সাত কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চললেও বাকি ২৩ দশমিক তিন কিলোমিটার এলাকা এখনো অরক্ষিত। পার্শ্ববর্তী আনোয়ারা উপজেলা বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকা চার কিলোমিটার। এ চার কিলোমিটারই অরক্ষিত। সাঙ্গু তীরবর্তী প্রায় ৭৬ কিলোমিটারের সিংহভাগের অবস্থাই বেহাল। সন্দ্বীপের ৫৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকার মধ্যে ৪৮ কিলোমিটারে আছে অস্থায়ী মাটির বাঁধ থাকলেও বাকি ১০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ অরক্ষিত। উপকূলীয় এ তিন উপজেলায় ১৬১ কিলোমিটারই অরক্ষিত বলে জানা যায়।
এভাবে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলো অরক্ষিতই আছে। কিছু এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণে কাজ চললেও ধীর গতির কারণে কাজ যথা সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে ফণীর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের জীবন হাতে নিয়ে চরম শঙ্কায় দিনাতিপাত করতে হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, ‘বর্তমানে দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে আমাদের ব্যাপক সংখ্যক লোকজন উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছেন। প্রয়োজনীয় মুহুর্তে তারা জনগণকে সহযোগিতা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় আমাদের নানা প্রকল্প চলমান। প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে নিয়মিতই তাগাদা দেওয়া হয়। আশা করছি, যথা সময়ে কাজ শেষ হবে।’
পাউবো চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলীয় ৩৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ দশমিক সাত কিলোমিটার এলাকায় ২৯৩ কোটি টাকায় চলছে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ। অবশিষ্ট ২৩ দশমিক তিন কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত। ছনুয়া ইউনিয়নের একটি অংশে প্রকল্পের কাজ বন্ধ আছে। উপকূলীয় ইউনিয়ন খানখানাবাদ, বাহারছড়া, গন্ডামারা, ছনুয়ার কিছু অংশে বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সরল, কাথারিয়া ইউনিয়নের সাগর উপকূল এখনো অরক্ষিত। তাছাড়া সাঙ্গু ও জলকদর খাল ঘেঁষা শেখেরখীল, সাধনপুর, পুকুরিয়াতেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা আছে।
অন্যদিকে, আনোয়ারার উপকূলীয় চার কিলোমিটারই অরক্ষিত। একই সঙ্গে সাঙ্গু তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা আছে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার। কিন্তু এর অধিকাংশই ভাঙাচোরা। এখানে ৩১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চললেও এখনো উপকূলের বিভিন্ন অংশ খোলা। গতকাল শুক্রবার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের পানি প্রবেশ করে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, ‘বার আউলিয়া এলাকা দিয়ে গতকালও পানি ঢুকেছে। এ এলাকায় বেড়িবাঁধের কোনো কাজ হয়নি। বেড়িবাঁধ অনেক জায়গায় এখনো খোলা। পুরো প্রকল্পের কোনো অংশেই সম্পূর্ণরূপে কাজ হয়নি। কাজ কোথাও হয়েছে, কোথাও হয়নি এমন অবস্থা। ফলে আমাদের এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা আছে।’
অন্যদিকে, সন্দ্বীপের ৫৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকার মধ্যে ৪৮ কিলোমিটারে আছে অস্থায়ী মাটির বাঁধ। মাটির বাধের বেশিরভাগ অংশই ভাঙনে বিপর্যস্ত। ১০ কিলোমিটার এলাকা এখনো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। বর্তমানে ৯ দশমিক ৭ কিলোমিটার এলাকায় ১৯৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সন্দ্বীপ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শঙ্কায় থাকে। সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার এলাকায় মাটির বাঁধ আছে। তবে বেশি জোয়ার আসলে দক্ষিণ দিকের ১নং ওয়ার্ড দিয়ে পানি ঢুকবে। উপজেলার সারিকাইত, মগধরা ও আজিমপুর ইউনিয়নেও বাঁধের অবস্থা খারাপ।’
এদিকে, নগরীর পতেঙ্গা থেকে সলিমপুর ৪৭ কিলোমিটার সাগর উপকূলের মধ্যে ২২ কিলোমিটারে স্থায়ী বাঁধ আছে। সিডিএ’র আউটার রিং রোড প্রকল্পটি শহর রক্ষা বাঁধ হিসাবে কাজ দিচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার রাস্তা ও শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থাকায় সুরক্ষিত আছে প্রায় ২৯ কিলোমিটার। বাকি সাত কিলোমিটার অরক্ষিত। সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ায় প্রকল্প কাজ চলমান থাকলেও সোনাইছড়ি ও ভাটিয়ারিতে কিছু অংশ এখনো খোলা আছে। বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের কাজ চললে চাক সিকদার খালে বেড়িবাঁধে স্লুইস গেট না থাকায় পানি ঢুকার সম্ভাবনা আছে। সমস্যা আছে দক্ষিণের সোনাইছড়ি ও ভাটিয়ারী অংশের বেড়িবাঁধের। মিরসরাই উপজেলারবাসীকে রক্ষা করছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কারণে সাগর উপকূলে বিরাট একটি অংশ বেড়িবাঁধের আওতায় এসেছে। সেখানে পাউবোর এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় প্রকল্পের কাজ চলমান।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন