চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খাদ্যপণ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকলেও থামছেই না ভেজাল পণ্যের বেচাকেনা।
ফুটপাত থেকে অভিজাত মল সবখানে চলছে ভেজাল পণ্য বিক্রির মহোৎসব। জড়িতদের কারদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদানেও থামছে না এই ভেজাল পণ্য ও পচা-বাসি মালামাল।
মাছ-মাংস থেকে শুরু করে ইফতারী পণ্য তথা ছোলা, জিলাপি, দুধ, ঘি, ডালডা এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুরও দেধারছে বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের বাজারে। এই ভেজাল রোধ করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা পৃথক এবং যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আসছে রমজান শুরুর আগে থেকেই।
সেই অভিযান আজ পর্যন্ত ছিল অব্যাহত। কিন্তু এতে মোটেও বন্ধ হচ্ছে না ভেজাল পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ।
এদিকে শুক্রবার দিনভর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ইফতারির বাজার মনিটরিংয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দেখতে পান, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ডালডায় ভেজা জিলাপিকে ঘিয়ে ভাজা বলে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার জিলিপির রঙ লাল করতে মেশানো হচ্ছে কাপড়ের রঙ। জিলাপি ছাড়াও ইফতারির লোভনীয় আরও বিভিন্ন পদ আগেই তৈরি করে রেখে দেওয়া হয়েছে ফ্রিজে। ২-৩ দিন পর সেই বাসি খাবার শুধুমাত্র তেলে ভেজে বিক্রি করা হচ্ছে।
শুক্রবার নগরীর জিইসি মোড়ে অভিজাত রেস্তোরাঁ বাসমতি এবং জামান রেস্টুরেন্ট-এ অভিযান চালিয়ে ভেজাল খাদ্যপণ্য তৈরি ও বিক্রি হাতেনাতে ধরা পড়ে। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বাসমতি রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন ইফতারির আইটেম আগেই মসলা মেখে রেখে দিয়েছে ফ্রিজে। এমনকি তিনদিন আগের আইটেমও তাদের ফ্রিজে রাখা আছে। সেগুলো শুধু গরম তেলে ভেজে বিক্রি করা হয় যা মানুষের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বাসমতি এবং জামান উভয় রেস্তোরাঁতেই ফ্রিজে রান্না করা গরু ও মুরগির মাংসের সঙ্গে রাখা হয়েছে কাঁচা মসলা। নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ অনুযায়ী, এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। অভিযানে বাসমতি রেস্টুরেন্টকে ৫০ হাজার টাকা এবং জামান রেস্টুরেন্টকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বাসি খাবার, মাংস ও ডালডা জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট বাজারে বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন। তিনি জানান, কাপড়ের রঙ মিশিয়ে জিলাপি, আলুর চপ ও বেগুনি তৈরির প্রমাণ পেয়ে একটি দোকানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কলার অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় এক বিক্রেতাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার র্যাব-৭ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি মো. মাশকুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অভিজাত সুপার শপ খুলশী মার্টের ফ্রিজ থেকে বিপুল পরিমাণ পচা মাছ-মাংস জব্দ করে র্যাব। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নগরের সবচেয়ে অভিজাত সুপার শপ আফমি প্লাজার আগোরায় ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান-র্যাব। অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ দই-দুধ, পচা মাছ-মাংস বিক্রির দায়ে সুপার শপ মালিককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। শুক্রবার পরিচালিত এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আখতারুজ্জামান।
সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে যারা খাদ্যে ভেজাল করছে, তাদের বিরুদ্ধো এই অভিযান আরো কঠোরভাবে জোরদার করার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে। বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতাকেই আগে সচেতন হতে হবে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে। জরিমানা, কারাদণ্ড দিয়ে এ ধরনের ভয়াবহ ভেজাল রোধ করা সময়সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা না জন্মালে শত চেষ্টারপরও এই ভেজালের বীজ রয়ে যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন