সাংবাদিকদের ওপর হামলা মামলার আসামিকে থানায় জামাই আদরে রেখেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। শুধু তাই নয়, শনিবার সকালে তাকে পুলিশের নিজস্ব গাড়িতে না নিয়ে ভাড়া করা একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোদাগাড়ী থানার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদুল বালি (৩৫)-কে এমন ‘জামাই আদর’ করায় সাংবাদিকসহ স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশের প্রধান প্রতিবেদক তানজিমুল হক ও একটি অনলাইনের সাংবাদিক রিমন রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিক থেকে মোটরসাইকেলযোগে রাজশাহীতে ফিরছিলেন। এ সময় গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ নামক স্থানে মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল কয়েকজন সহযোগীসহ একদফা তাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। পরে শহিদুল, তার ভাই তোফায়েল, ভগ্নিপতি সাজ্জাদ, মাদক ব্যবসায়ী তুহিন ও রানাসহ আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। মাদক ব্যবসায়ীরা তানজিমের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। রিমনের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় একটি ক্যামেরা ও ১৫ হাজার টাকা।
এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা রিমনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় আশপাশের ব্যবসায়ী ও পুলিশ এসে মাদক ব্যবসায়ীদের কবল থেকে দুই সাংবাদিককে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় তানজিম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় শুক্রবার রাতেই পুলিশ শহিদুলকে গ্রেফতার করে।
কিন্তু ওই রাতে তাকে থানা হাজতে রাখা হয়নি। বিধি ভেঙে তাকে থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষের পাশের একটি গেস্ট রুমে তাকে রাখা হয়। তবে তার হাতে লাগানো ছিল না হাতকড়া। গেস্ট রুমের সোফায় বসে, শুয়ে আয়েশ করে রাত কাটান মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল। মোবাইলেও কথা বলেন দিব্যি। আর তাকে ছাড়িয়ে নিতে রাতভর থানায় তদবির চালান শহিদুলের চাচা পিয়ারুল ইসলাম, স্থানীয় পৌর মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু। তবে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরদারিতে এবং থানায় মামলা রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় তাকে ছাড়তে পারেনি থানা পুলিশ। পরে শনিবার বেলা ১১টার পর আবারও নিয়ম ভেঙে তাকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো-চ ১১-০৮৫১) করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
মাইক্রোবাসে গোদাগাড়ী থানার কন্সটেবল মানিক, আবদুল আলীম ও আমীর ছিলেন। এছাড়া শহিদুলের শ্যালক রাসেল ও শাহজাহান আলী নামে অপর এক ব্যক্তিসহ আরও কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন ওই মাইক্রোবাসে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা মামলার আসামিকে নিকটাত্বীয়দের বেষ্টনির মধ্যে দিয়ে আদালতে তোলায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে রাজশাহীর সাংবাদিকদের মধ্যে।
আহত সাংবাদিক তানজিম জানান, দিন কয়েক আগে মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল ও তার সহযোগীরা এলাকার এক নাবালিকা মেয়েকে তুলে এনে জোরপূর্বক আরেক মাদক ব্যবসায়ী তুহিনের সঙ্গে বিয়ে দেন। এ ঘটনায় মেয়েটির মা মাদক ব্যবসায়ী শহিদুলসহ অন্যদের আসামি করে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের লিখিত অভিযোগ দেন। নাবালিকা মেয়েকে তুলে এনে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগটি নির্বাহী অফিসার থানার ওসিকে মামলা হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেন। এনিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হলে মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপরই মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় গোদাগাড়ীতে দুই সাংবাদিককে পেয়ে তাদের ওপর হামলা করেন।
এমন একজন আসামিকে থানায় ‘জামাই আদরে’ রাখা এবং মাইক্রোবাসে করে আদালতে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর থানার ওসি হিফজুর আলম মুন্সি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী থানার পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক জানান, হামলার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)। শনিবার দুপুরে আরইউজের সভাপতি কাজী শাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশীদ এক যুক্ত বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ