বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ। দিনটিকে সামনে রেখে এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়ালের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হন। এ ছাড়াও প্রায় ২৫ হাজার গবাদি প্রাণী এ রোগের শিকার হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালের আগে দেশে প্রতি বছর ২ হাজারেরও বেশি মানুষ কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। ২০১০ সাল থেকে দেশের সব জেলায় স্থাপিত জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সেন্টার থেকে মানুষ বিনামূল্যে টিকা গ্রহণ করায় এই মৃত্যুর হার কমতে থাকে। ২০০৯ সালে আনুমানিক ২০০০-এর অধিক থেকে কমে ২০১৯ সালে সারা দেশে ২০০-তে নেমেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক নির্মূলে টিকাদান, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ান’। কারণ বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে ১ জন ও বছরে ৫৫ হাজার মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করছেন। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জলাতঙ্ক একটি মরণব্যাধি, যা প্রাণী থেকে মানুষে ও প্রাণীতে সংক্রমিত হয়ে থাকে। মূলত কুকুরের মাধ্যমে রোগটি সংক্রমিত হয়। কুকুরকে জলাতঙ্ক থেকে নিরাপদ করতে বিশ্বব্যাপী জলাতঙ্ক নির্মূলে ‘মাস ডগ ভ্যাকসিনেশন’ বা ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। কোনো এলাকার ৭০ ভাগ কুকুরকে টিকা দিলে ওই এলাকার কুকুরের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। তিন বছরে তিন রাউন্ড টিকা দিলে কুকুর থেকে মানুষ বা কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীতে জলাতঙ্ক সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। সংশ্লিষ্টরা জানান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্কমুক্ত বিশ্ব গড়তে কাজ করছে। বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ। জলাতঙ্কজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২০০৯ সালে আনুমানিক ২০০০-এর অধিক থেকে কমে ২০১৯ সালে সারা দেশে ২০০-তে নেমে এসেছে। ২০১৮ সালে শতকরা ৬৮ ভাগ কমে ৪৯-এ নেমে এসেছে। টিকার মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ হয় এই সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সারা দেশে ৬৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাখালীতে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে বিনামূল্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোগীর বেশি টিকা পেয়েছে যা ২০১৮ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৯-এ উন্নীত হয়েছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিডিসি এর মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় তিন লাখ ভায়াল ভ্যাকসিন দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, মহাখালীতে প্রদান করা হয়েছে। জলাতঙ্ক নির্মূলে ব্যাপকহারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী ব্যাপক হারে কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত ৬৪টি জেলা সদর পৌরসভা ও ১০টি সিটি করপোরেশন এবং ৬০টি জেলার সব উপজেলায় প্রথম রাউন্ড, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, পাবনা, নীলফামারী জেলায় দ্বিতীয় রাউন্ড এবং সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলায় তৃতীয় রাউন্ড টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩০টি কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪টি জেলায় প্রথম রাউন্ড ও ১৬টি জেলায় দ্বিতীয় রাউন্ড আরও আনুমানিক ৫ লাখ কুকুরকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।