সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বৃষ্টি হলেই নগর ভাসে জলে

সিলেটে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজে আসেনি ৫৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বৃষ্টি হলেই নগর ভাসে জলে

মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানি উঠে গেছে সিলেট শহরের অনেক বাসা-বাড়িতে। গতকালের ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে দখলমুক্ত করা হয়েছে ছড়া-খাল। খনন করে উভয় পাশে নির্মাণ করা হয়েছে গার্ডওয়াল। পুরনো সংকীর্ণ ড্রেন ভেঙে করা হয়েছে গভীর ও প্রশস্ত। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন গেল কয়েক বছরে ব্যয় করেছে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু বিশাল এই বাজেটের প্রকল্পগুলো কোনো কাজেই আসছে না নগরবাসীর। জলাবদ্ধতা নিরসনের চেয়ে উল্টো পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ। ভারী বৃষ্টিপাত হলেই নগরজুড়ে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক জলজট। গত শনিবার রাতে এক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে নগরীর প্রায় অর্ধেক এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। জলাবদ্ধতার এই অভিশাপের জন্য সচেতন মহল দায়ী করছেন সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়নকে। আর করপোরেশন বলছে, বন্যার কারণে নগরীর ড্রেনগুলোতে পলি জমাট হওয়া এবং সময় মতো পরিচ্ছন্ন করতে না পারায় ভয়াবহ এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম শেষ হলে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হবে না নগরবাসীকে।

গত শনিবার রাত ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ভারী বর্ষণ হয়। গেল কয়েক দিনের দাবদাহের পর এই বৃষ্টি নগরবাসীর জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত তা ভোগান্তিতে রূপ নেয়। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর জিন্দাবাজার, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, লোহারপাড়া, বড়বাজার, লামাবাজার, মদিনামার্কেট, চারাদিঘিরপাড়, সওদাগরটুলা, সোবহানীঘাট, যতরপুর, উপশহর, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, শাপলাবাগ, তালতলা, সুবিদবাজার, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ, জল্লারপাড়, ভাতালিয়া, কানিশাইল, মজুমদারপাড়া, মেন্দিবাগ, দরগামহল্লা, লালদিঘিরপাড়, কুয়ারপাড়সহ প্রায় অর্ধেক নগরীজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নগরীর রাস্তাঘাটে হাঁটু পানি জমে। অনেক বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও মার্কেটের নিচতলায় পানি উঠে যায়। ফলে বাসার আসবাবপত্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালপত্র ভিজে নষ্ট হয়। সিলেট নগরীর লাইব্রেরিপাড়া হিসেবে পরিচিত জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন। শনিবার রাতের বৃষ্টিতে জিন্দাবাজারের রাস্তায় হাঁটু পানি জমে। পানি রাজা ম্যানশনের ভিতরে ঢুকে অন্তত ২০টি লাইব্রেরির বই ভিজিয়ে নষ্ট করে। অনেকের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়।

এ অবস্থায় গত শনিবার রাত থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। ফেসবুকে অনেককেই সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনা করতে দেখা যায়। জলাবদ্ধতার জন্য মেয়রের অপরিকল্পিত উন্নয়ন, খামখেয়ালিপনা ও একগুয়েমিতাকে দায়ী করেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো ধরনের মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই সিলেট নগরীতে ইচ্ছামতো ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ফলে কোথাও ছোট আবার কোথাও সরু ড্রেন নির্মাণের ফলে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলে অল্প বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি ফুলেফেঁপে নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। এতে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি। তবে অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা- এমনটা মানতে নারাজ নগরভবন কর্তৃপক্ষ।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে এখন পর্যন্ত ছড়া, খাল উদ্ধার, গার্ডওয়াল ও ড্রেনেজ নির্মাণে ৫৩৬ কোটি টাকার যেসব কাজ হয়েছে তা পরিকল্পনা মাফিকই হয়েছে। আগে যেখানে বর্ষাকালে ভারী বর্ষণ হলে নগরীর ৫০-৬০ ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হতো- এখন পরিমাণে তা কমেছে। গত শনিবার রাতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরির জন্য বন্যায় ড্রেনে পলি জমাকে দায়ী করে নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘বন্যার সময় ড্রেনগুলোতে প্রচুর পরিমাণ পলি জমে। ঈদের কারণে যথাসময়ে ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব হয়নি। তাই শনিবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ড্রেনগুলো দিয়ে কাক্সিক্ষতভাবে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া রাস্তা ও ড্রেন উঁচু হওয়ায় অনেকের বাসাবাড়ি ও দোকানপাট নিচে পড়ে গেছে। এসব স্থাপনার মালিকদেরও নিজ উদ্যোগে প্রতিরক্ষামূলক উদ্যোগ নিতে হবে। ড্রেন পরিষ্কারের কাজ শেষ হলে এভাবে জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হবে না নগরবাসীকে।’

জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তির জন্য নগরীর বড় বড় ছড়া-খালগুলোর মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ ও পাম্পিং স্টেশন বসাতে হবে জানিয়ে নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘এই উদ্যোগ না নিলে নগরীকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে স্থায়ী মুক্তি দেওয়া যাবে না। তবে এ কাজ করতে হলে আরও এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর