রংপুরে একাধিক ইস্যুতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উত্তেজনা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া না হলে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করা হয়েছে। ইস্যুগুলো হচ্ছে- সম্প্রতি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে রংপুরে কোনো প্রোগ্রাম করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বিক্ষোভ সমাবেশ করে মোস্তফাকে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। অপর ইস্যুটি হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা হারাধন হারার স্ত্রী দুই মাস পরে স্বামী হত্যার মামলা করেছেন। ওই মামলায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে হারাধনের স্ত্রীর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। হারাধন নিহতের দুই মাস পরে দায়ের করা এই মামলা নিয়ে অনেকের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে এই মামলার নেপথ্যে কে? তারা বলছে, চলমান পরিস্থিতিতে মামলা করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গত সোমবার রাতে জাতীয় পার্টির সেন্ট্রাল রোডের কার্যালয়ে জাপার যৌথ সভায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে রংপুরে কোনো প্রোগ্রাম করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছেন। মোস্তফার এমন ঘোষণা করায় রংপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল থেকে অবিলম্বে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমা চাওয়াসহ বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। নয়তো ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে রংপুর নগরীর মেডিকেল মোড় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বুধবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন ছাত্ররা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, মনে রাখবেন আপনারা ২৪ এর বিপ্লবকে প্রশ্ন তুলছেন। এই রংপুরের মাটি থেকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই আপনারা আপনাদের বক্তব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেন, তা না হলে বাংলার এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আপনাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা হারাধন রায় হারা নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন বৈষম্যরিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। শনিবার রাত ৯টায় মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন ছাত্র নেতারা।
সমন্বয়ক নাহিদ হাসান খন্দকার জানান, গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ওই দিন হারাধন রায় হারা নিজেই পিস্তল দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনায় কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা মারা যান। এ ঘটনায় হারাধন রায়ের স্ত্রী কনিকা রানী গত ২ অক্টোবর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের নামে স্বাধীন দেশে কোনো মামলা হতে পারে না। মামলা প্রত্যাহারসহ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিরা গ্রেপ্তার না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। সেই সঙ্গে আমাদের সরকার যদি এ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয় তবে প্রয়োজনে তাদেরকেও আমরা নামাব।