প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত সিলেট আজ সুনাম হারাতে বসেছে। টিলা, পাহাড়, নদী, বাগান, কৃষিজমি, পর্যটন কেন্দ্র সবখানে চলছে পরিবেশের ওপর ‘নির্যাতন’। নিষেধাজ্ঞা, আইনি বাধা, অভিযান কিছুই যেন কাজ করছে না। রাতদিন সমানতালে পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন অনেকটাই নীরব। এ নিয়ে সচেতন মহলেও চলছে ক্ষোভ। সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ব্রাহ্মণছড়া চা বাগান এলাকায় টিলা কেটে মাটি বিক্রির অভিযোগে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ২৯ এপ্রিল মামলাটি করেন সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ। তবে পরিবেশ ধ্বংসের এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। বরং সিলেটজুড়ে চলমান ধারাবাহিক দুর্যোগের প্রতিচ্ছবি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ অঞ্চল এখন লোভী মানুষের নির্মমতার শিকার। সিলেট নগরীর উপকণ্ঠ এবং প্রায় প্রতিটি উপজেলায় একের পর এক টিলা কেটে আবাসন প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। বড় বড় প্রকল্পের আড়ালে ধ্বংস হচ্ছে শত শত বছরের পুরোনো টিলা ও বনভূমি।
কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, জাফলংয়ের পিয়াইন ও ডাউকি নদী এবং গোয়াইনঘাট এলাকায় প্রতিনিয়তই চলে পাথর উত্তোলনের নামে পরিবেশের ওপর নিদারুণ নির্যাতন। রাতের আঁধারে ‘বোমা মেশিন’ বসিয়ে তলা থেকে পাথর উঠিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে নদীগুলো হারাচ্ছে স্বাভাবিক গতিপথ। নদীতে জমে থাকা বালু ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জলজ সম্পদ নদীজীবনই বিপন্ন করে তুলেছে।
সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা বলছেন, এ ধ্বংসযজ্ঞের মূল কারণ রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও প্রশাসনিক প্রশ্রয়। ক্রাশার মেশিন বসানো, কোয়ারি এলাকা ঘোষণা করে টিলা কাটা এবং পর্যটন কেন্দ্রের জমিতে পাথর উত্তোলনের মতো ঘটনা প্রশাসনের নজরের বাইরে ঘটছে না; বরং সচেতনভাবে চোখ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। তবে দায় এড়াতে পারে না খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোও। পাহাড় ও নদী থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা এ সংস্থার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অনেকেই মনে করেন, সরকারি নীতিমালায় পরিবর্তন এনে খনিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনকে দেওয়ার সময় এসেছে।
পরিবেশ ধ্বংস প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভেকেট শাহ শাহেদা বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় আমরা অনেক মামলা করেছি। উচ্চ আদালতেও যাচ্ছি।’ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কীম বলেন, ‘প্রশাসন আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সিলেটের পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেও পরিবেশ ধ্বংস থামেনি। অতীতের মতোই ধ্বংসাত্মক কর্মকা চলছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’