ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে ইরানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৪৫ লাখ আফগান শরণার্থী। ইসরায়েলি হামলা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা কোথাও নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে না। অথচ নিজ দেশ আফগানিস্তানেও ফিরতে পারছে না তালেবান শাসনের ভয়ে।
আফগান শরণার্থী রাহেলা রাসা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। চলাচলের স্বাধীনতা নেই। নানাভাবে হয়রানি ও অপমানের শিকার হচ্ছি।’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, ইরানে বাস করা আফগানদের সংখ্যা আনুমানিক ৪৫ লাখ। তবে বাস্তবে সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করা হয়। ইরান সম্প্রতি বহু আফগানকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে তালেবান শাসন থেকে পালিয়ে নিয়মিত আফগানরা ইরানে ঢুকছে কাজ ও নিরাপত্তার আশায়।
২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। স্বাধীন গণমাধ্যম ও সুধীসমাজ প্রায় বিলুপ্ত, পুরনো প্রশাসনের নিরাপত্তা কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীরা শিক্ষা ও কর্মস্থলে নিষিদ্ধ। ফলে ইরানে আশ্রয় নেওয়া আফগানদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
তেহরান ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলে আফগান শরণার্থীরা চরম খাদ্য সংকটে। একজন শরণার্থী বলেন, ‘আমার কাছে বৈধ কাগজপত্র নেই। তাই শিশুর জন্য ফর্মুলা দুধ পর্যন্ত কিনতে পারছি না।’
ঘোর প্রদেশের আব্দুল গনির ১৮ বছরের ছেলে আব্দুল ওয়ালি কাজের সন্ধানে ইরানে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। ছেলেকে হারিয়েছি।’
ফিরে যাওয়ার উপায় নেই অনেকের। তালেবানের ভয়ে সাবেক নিরাপত্তা সদস্যরা আফগানিস্তানে ফিরতে পারছেন না। ইরানে নিযুক্ত আফগানিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ওমর দাউদজাই বলেন, 'সংঘাত দীর্ঘ হলে অনেককেই বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হবে, যা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে।'
এই সুযোগে মানবপাচার চক্রও সক্রিয়। গুজব ছড়িয়েছে তুরস্কের সীমান্ত নাকি খুলে গেছে। তবে অভিবাসী অধিকারকর্মী আলী রেজা কারিমি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সীমান্ত কেবল বৈধ পাসপোর্টধারী ইরানির জন্য খোলা। আফগানদের জন্য বন্ধ। পাচারকারীরা মিথ্যা বলছে।’
তিনি ও দাউদজাই আফগান শরণার্থীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। ইরানে যতটা সম্ভব নিরাপদ স্থানে থেকে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/আশিক