ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল ও কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে নদীসংলগ্ন ৮৫টি চরের মানুষের মাঝে। পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলের খেত।
এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী-সিলোনিয়া নদীর দুটি স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। এতে ফুলগাজী উপজেলার অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকাল ৩টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি যেভাবে হুহু করে বাড়ছে তাতে যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তার চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টানা কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে তিস্তার চরাঞ্চলে নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ডুবে গেছে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে চাষাবাদকৃত ফসলের খেত। তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ এলাকার বাসিন্দা মহিবুর রহমান বলেন, আমরা নদীপাড়ের মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকি। বন্যা, খরা নদী ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের জীবন অতিবাহিত হয়। বিশেষ করে ভারতের উজানে যে গেট রয়েছে তার নাম গজলডোবা, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। খরা মৌসুমে গেটটি বন্ধ রাখা হয় আর বর্ষা এলেই থেমে থেমে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের ভাসিয়ে দেয়।
সদরের তিস্তা নদীঘেরা চর রাজপুরের বাসিন্দা মহসিন, আশিক ও ওমর জানান, বাড়ির চারপাশের পানি যে কোনো সময় ঘরে ঢুকে পড়বে। তাই দুশ্চিন্তায় আছি। কোথায় গিয়ে ঠাঁই নেব আমরা বুঝতে পারছি না।
তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, উজানের ঢলে শুক্রবার ভোর থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে পানি এখনো বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের ৪৪ গেট খুলে রাখা হয়েছে। ফেনী প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বণিকপাড়া গ্রামের সহদেব বৈদ্যের বাড়িসংলগ্ন মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ এবং গোসাইপুর এলাকা অংশে সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে উপজেলার উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বিজয়পুর, বণিকপাড়া, বসন্তপুর, জগতপুর, গোসাইপুর, করইয়া ও নিলক্ষী গ্রাম প্লাবিত হয়। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ফুলগাজী তরকারি বাজারসংলগ্ন স্থানে মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে বাজারের একটি অংশ প্লাবিত হয়েছে। একই দিন দুপুর থেকে পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মণিপুর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এদিকে মধ্যরাতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, নদীর পানি ১০ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেই মাটির বাঁধগুলোর বিভিন্ন স্থান ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে পাউবো তাকে অবগত করেছে। নতুন করে বাঁধের আর কোনো অংশ যেন না ভাঙে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানি বাড়ছে। তবে মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নিরাপত্তায় আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।